কর্মক্ষেত্রে কোথাও পিছিয়ে নেই নারীরা। রাজমিস্ত্রি থেকে শুরু করে খেত নিড়ানি, ইটভাটা, রাইস মিল-চাতালসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানায় কাজ করছেন গাইবান্ধার নারীরাও।

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে কাজের ধরণ, পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্রসহ নানান বিষয়। সব ক্ষেত্রেই এখন সমানভাবে অংশগ্রহণ করছে নারীরা। খেতের কাজ থেকে শুরু করে মহকাশে যাত্রা পর্যন্ত নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। তবে সব বদলালেও আজও বদলাইনি কর্মস্থলে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য। একই কর্মঘণ্টা, একই কাজ ও একই শ্রম দিয়েও নারীরা পুরুষের তুলনায় কম বেতন বা মজুরি পান।

সরেজমিনে সোমবার (১ মে) বিকেলে গাইবান্ধার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প নগরীতে (বিসিক) গিয়ে দেখা যায়, ওহি জুট মিলসে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক। তারা মিলে চটের কাটিং, লেমেনেটিং, প্রিন্টিং, সেলাই, বান্ডিল ও ফিনিসিং বেলের কাজ করছেন।

শ্রমিকদের মধ্যে মাহফুজা আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তার বাড়ি গাইবান্ধা শহরের খানকাহ শরীফ এলাকায়। মাহফুজা জানান, সে জুট মিলসে অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা কাজ করে তার মাসিক বেতন ৮০০০ হাজার টাকা।

একই কারখানায় একই পদে কাজ করেন আসাদুল ইসলাম। আসাদুলের বাড়ি নিলাফামারীতে। আসাদুল জানান, প্রতিদিন ৫০০ টাকা দিন হাজিরা হিসেবে কাজ করেন তিনি। সে হিসেবে তার মাসিক বেতন ১৩০০০ হাজার টাকা। তবে আসাদুলের অভিযোগ সরকারি কিংবা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বছরের ছুটি পান না তারা। 

শুধু মাহফুজা ও আসাদুলই নয় এই প্রতিষ্ঠানে দুই শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করে থাকে। যেখানে নারী শ্রমিকের সংখ্যা দেড় শতাধিক। নারী-পুরুষ সমান কাজ করলেও নারীদের বেতনের বেলায় রয়েছে বৈষম্য।

এ ব্যাপারে ওহি জুট মিলের ম্যানেজার সনিয়া সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে মূলত নারীদের দিয়ে কাজ বেশি হয়। এই জুট মিলের সুতাটা আমরা বাইরে থেকে নিয়ে আসি। এরপর তা থানে পরিণত করি। শ্রমিকদের দিয়ে লেমিনেটিং করে বস্তা তৈরি করি। বিভিন্ন সাইজের বস্তা এখানে তৈরি করা হয় যেমন, ১০ কেজি, ২০ কেজি, ৫০ কেজির বস্তা। মূলত অর্ডার অনুযায়ী বস্তা তৈরি করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে ২২০ জন শ্রমিকের মধ্যে ১৫০ জনই নারী বাকি ৭০ জন পুরুষ। তবে নারী ও পুরুষভেদে বেতনের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। নারীরা ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ওভারটাইমসহ ১২ হাজার পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে। পুরুষরা ১২ হাজার থেকে শুরু করে ১৫/১৬ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকে।

নারী-পুরুষের কেন এই বেতন বৈষম্য?-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, নারীদের দিয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হয় আর পুরুষদের দিয়ে উৎপাদন বেশি হয়। অর্থাৎ একজন নারী দিনে তিন থেকে চারশ বস্তা প্রস্তুত করতে পারে অপরদিকে একজন পুরুষ দিনে চারশ থেকে পাঁচশ বস্তা প্রস্তুত করতে পারে। যার কারণে নারীরা কিছুটা কম বেতন পান। তাছাড়া নারী কর্মক্ষেত্রে কম থাকতে থাকতে পারে পক্ষান্তরে একজন পুরুষ কর্মক্ষেত্রে বেশি সময় থাকতে পারে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে নারী শ্রমিকদের বেতন দুই তিন হাজার টাকা কম করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা বিসিক জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাইবান্ধা বিসিক শিল্প নগরীর সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ওহি জুট মিল। যেখানে অধিক সংখ্যক পরিমাণ নারী শ্রমিক কাজ করে থাকে। সেই তুলনায় পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা কম। নারী ও পুরুষ সমান কাজ করলেও পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের বেতন কিছুটা কম। এই বিষয়টা দৃষ্টিকটু। আমরা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষকে বলেছি যেন নারী ও পুরুষের যে বেতন বৈষম্য আছে সেটা দূর করা হয়। কারণ নারী ও পুরুষের অধিকার সমান। তারা কেন বেতনের দিক থেকে পিছিয়ে থাকবে। তিনি মনে করেন নারী ও পুরুষের বেতন বৈষম্য দূর হয়ে কর্মক্ষেত্রে নারীদের বিচরণ আরও বাড়বে।

আরকে