‘৮-৯ হাজার টাকায় সংসার চলে না। সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। প্রতি মাসে ধার করতে হয় আমাদের। অল্প বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। কী করব, বিকল্প পথ নেই। অন্য কাজও জানি না।’
 
এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করা রমজান আলী (ছদ্মনাম)। তার মতোই কষ্টের কথা বলেন, সিকিউরিটি গার্ড রাজিব ও কুমার (ছদ্মনাম)। তারা রাজশাহীতে পৃথক তিনটি ব্যাংকের বুথে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে কুমার বেতন পান ৫ হাজার ৮০০ টাকা। আর রমজান ৯ হাজার ও রাজিব ৮ হাজার টাকা বেতন পান বলে জানান। তবে এই বেতনে তাদের মধ্যে সস্তুষ্টি নেই। 
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড জানান, তারা কোনো না কোনো কোম্পানির অধীনে কাজ করেন। সিকিউরিটি গার্ডদের পরিচালনা করা কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে তাদের কর্মী সরবরাহ করে। সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তাদের (সিকিউরিটি গার্ড) বেতন কম দেয়। কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা কেটে নেয়।
 
যেমন একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির থেকে সিকিউরিটি গার্ড সরবারহকারী কোম্পানি যদি ১০ হাজার টাকা নেয়। তবে তারা একজন সিকিউরিটি গার্ডকে দেয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা কম। বিষয়টি সিকিউরিটি গার্ডরা জানলেও তাদের কিছু বলার নেই। কর্ম বাঁচাতে তাদের চুপ থাকতে হয়। তবে তারা কোন কোম্পানি থেকে কাজ করেছেন তাদের নাম ও যোগাযোগের কোনো মুঠোফোন নম্বর দিতে রাজি হননি। 
 
সিকিউরিটি গার্ড রাজিব বলেন, মে দিবস বলছেন, ভালো কথা। এদিন শ্রমিকদের ছুটির দিন। এই ছুটির কথা কাকে বলব। আমাদের ছুটি নেই। দুই বছর আগে যাত্রীবাহী বাসের কাজ ছেড়ে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ শুরু করি। কিন্তু যে বেতন পাই, তাতে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। 
 
অপর সিকিউরিটি গার্ড রমজান আলী বলেন, আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে শ্রমিক। সবাই টাকার বিনিময়ে শ্রম দেন। এই শ্রমের নাম একেক জায়গায় একেক রকম। কোথায় শ্রমিক, কোথাও চাকরি, কেথায় বা লেবার ও সিকিউরিটি গার্ড বলে থাকে। তবে আমরা সবাই টাকার বিনিময়ে শ্রম দেই। অন্য কাজের মানুষদের শ্রমিক দিবসের ছুটি থাকে। কিন্তু আমাদের কোনো ছুটি নেই। 
 
তিনি আরও বলেন, আমার কাজের বয়স এক বছর। এর আগে শাহজালাল ব্যাংকে ছয় বছর কাজ করেছি। তারপর ব্যাংকের বুথে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ শুরু করি। আমরা কোনো দিবসে ছুটি পাই না। চাকরির সময় কোম্পানি থেকে বলা হয়েছিল বছরে ২৪ দিন ছুটি পাওয়া যাবে। কিন্তু এক দিনও ছুটি পাইনি। মাসে তো দূরের কথা বছরেও ছুটি পাই না। প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে কথা বলে ছুটি কাটাতে হয়। আমাদের কোনো দিবস নেই। সব দিনই সমান। গত ঈদের দিনে ছুটি পাইনি। চাঁদরাতে ডিউটি করেছি। এরপরে সকালে অফিসের সামনে ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ি গিয়েছি। তার পরে আসে অপর সহকর্মী ফেরদৌস।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির একাউন্টেন্ট বলেন, আমাদের কোম্পানিতে একজন কাজ করেন। আমরা তার বেতন হিসেবে সাড়ে ১০ হাজার টাকা দেই। কিন্তু তাকে কম টাকা দেওয়া হয় বলে জেনেছি। তবে তাকে (সিকিউরিটি গার্ড) কত টাকা দেয় জানি না। 
 
নাইস ড্রিম সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, আমাদের কর্মীদের ৯ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। রাজশাহীতে ২০ জনের বেশি আমাদের সিকিউরিটি গার্ড কাজ করেন। 

কম বেতনের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা সিকিউরিটি গার্ড নেবেন তাদের সঙ্গে আমরা চুক্তি করি। পরে তারা ঠিক মতো বেতন দিতে চায় না। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয় এদের (সিকিউরিটি গার্ড) কোনো কাজ নেই। এরা কোনো পরিশ্রমও করে না। তাদের কেন এত টাকা বেতন দেব।
 
তবে সিকিউরিটি গার্ডদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে এমন কোনো সংগঠন রাজশাহীতে নেই বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাই এ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
এ বিষয়ে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন রাজশাহী জেলার সভাপতি সিরাজুর রহমান খান বলেন, পহেলা মে শ্রমিক দিবস। এদিন বিশ্বের অনেক দেশ দিবসটি পালন করা হয়। তবে সিকিউরিটি গার্ডদের বেতন বৈষম্যের বিষয়টা জানি না। তারা তো জরুরি সেবায় কাজ করেন। তাই তাদের ছুটি নেই।
 
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওয়ালী খান বলেন, এটি এক ধরনের শোষণ। আপনাকে ৮ ঘণ্টা কাজ করাবে। আর বেতন দেওয়াার বেলায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেতন দেবে। আর বাকিটা তারা নয়-ছয় করবে। এটা মহা অন্যায়। একটা মানুষ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায় কীভাবে চলবে। চলা খুবই কষ্টকর। আমরা এর বিরোধিতা করছি। সরাসরি শ্রমিককে কাাজে নিয়োাগ করতে হবে। শ্রমিকের বেতন তার হাতেই দিতে হবে। এটা আমাদের দাবি। 

আরএআর