এমপির ফোনে বন্ধ নিয়োগ পরীক্ষা, অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক
বরিশাল-২ আসনের (উজিরপুর-বানারীপাড়া) সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম তালুকদারের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রেখে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম। সোমবার (১ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, উজিরপুরের রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচটি এবং বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ১৮ মার্চ বরিশাল জিলা স্কুলে কেন্দ্রে ওই নিয়োগের পরীক্ষা সম্পন্ন করার দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন। এক পর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুখেন্দু শেখরের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সে কারণে নিয়োগ পরীক্ষা ওই দফায় স্থগিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
পুনরায় ১ মে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময় সোমবার (১ মে) পুনরায় ওই নিয়োগ পরীক্ষার সকল আয়োজন করে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। তবে এমপি শাহে আলম জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নূরুল ইসলামকে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সংসদ সদস্যর নির্দেশ পেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করলে প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অবরূদ্ধ করে রাখে প্রার্থীরা।
প্রার্থী বিনয় হালদার বলেন, অফিস সহকারি পদে পরীক্ষার দেওয়ার জন্য সকাল নয়টার মধ্যে বরিশাল জিলা স্কুলে এসে বসে রয়েছি। দুপুরে শুনি এমপি পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছেন। এর আগেও একইভাবে এমপি একই পরীক্ষা বন্ধ করে দেন। মূলত তার মনের মতো না হলেই পরীক্ষা বন্ধ করে দেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
খালেদ সরদার ও সুকান্ত চন্দ্র দাস নামের দুই প্রার্থী জানান, প্রায় ২ ঘণ্টা পর প্রধান শিক্ষক পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার জন্য সময় ধার্য রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুখেন্দু শেখর বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে পাঁচটি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। ১৮ মার্চ পরীক্ষা গ্রহণের দিন এমপি শাহে আলম তার পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি দিতে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হন। তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে নিয়োগ নিয়ে আমার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে নিয়োগ পরীক্ষা আর হয়নি। ঐ পরীক্ষা সোমবার পুনরায় বরিশাল জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থাকে। কিন্তু এসে শুনি প্রধান শিক্ষককে সংসদ সদস্য ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, হঠাৎ করে এমপি শাহে আলম আমাদের স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তার কারণে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এমপি শাহে আলমের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি না দেওয়া হলেই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
হারতা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুনিল বিশ্বাস বলেন, আমার বিদ্যালয়ে কিছুদিন আগে চারটি পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় এমপি শাহে আলম নিজে উপস্থিত ছিলেন। একটি পদে তার (এমপি শাহে আলম) পছন্দের প্রার্থী ছিলেন, সেই প্রার্থী পরীক্ষায় প্রথম হয়ে চাকরি পেয়েছেন। নিয়ম ছাড়াই এভাবে দীর্ঘদিন ধরে এমপি শাহে আলম নিজে নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত থাকছেন।
একই ধরণের অভিযোগ করেন উপজেলার আ. মজিদ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাকোঠা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম মৃধা। তিনি বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমপি শাহে আলম সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। শাহে আলম অযাচিতভাবে নিয়োগ বোর্ডে হাজির হয়ে প্রশ্ন করেন। তার কারণে উজিরপুর ও বানারীপাড়া উপজেলায় শত শত নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা।
উজিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান বলেন, বরিশাল জিলা স্কুলে সোমবার সকাল ১০টায় রামেরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা দিতে প্রার্থীরা সবাই আসে। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষককে এমপি শাহে আলম ফোন করে পরীক্ষা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন বলে প্রধান শিক্ষক আমাদের জানান। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য না হয়েও নিয়োগ বোর্ডে এমপি হস্তক্ষেপ করতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, রোববার এমপি শাহে আলম আমাকে ফোন করে নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়ার অনুরোধ করেন। সোমবারও তিনি আমাকে ফোন দিয়ে নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্য বলেন। তার সম্মানে পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে এমপি শাহে আলম মুঠোফোনে বলেন, নিয়োগটি দুর্নীতির মাধ্যমে হচ্ছিল। তাছাড়া এই নিয়োগের বিরুদ্ধে এলাকায় মানববন্ধন ও পোস্টারিং হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেজন্য আমি ফোন করে বন্ধ রাখতে বলেছি।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এবিএস