নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির মালিকানাধীন একটি দূরপাল্লার বাস বগুড়ায় আটকে রাখায় বাস মালিক সমিতির সঙ্গে বগুড়ার শাহ ফতেহ আলী বাস মালিকের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। বুধবার (৩ মে) সকাল থেকে এই দুই জেলার পরিবহন একে অপরের জেলার সীমানা অতিক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে কয়েকটি দূরপাল্লার বাস নওগাঁ থেকে নাটোর হয়ে চলাচল করলেও বেশিরভাগ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। 

এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন ঢাকাগামী দূরপাল্লার যাত্রীরা। বিষয়টি সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

জানা গেছে, নওগাঁ থেকে প্রায় ৬০টি দূরপাল্লার বাস বগুড়ার ওপর দিয়ে ঢাকায় চলাচল করে। জেলার সাপাহার থেকে শাহ ফতেহ আলীর একটি বাস চলাচল করে। সেখান থেকে আরও একটা বাস চালানোর জন্য প্রস্তাব করে শাহ ফতেহ আলীর মালিক পক্ষ। কিন্তু নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপ তা প্রত্যাখ্যান করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই মধ্যে এবারের ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে থেকে এ রুটে সাপাহার উপজেলা থেকে বরেন্দ্র এক্সপ্রেসের ব্যানারে নতুন করে তিনটি দূরপাল্লার বাস চালু করে জেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা। জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের ৩৬০ জন সদস্যের অর্থায়নে কেনা হয় এই তিনটি বাস। সাপাহার উপজেলা থেকে নিয়মিত চলাচল করছিল এসব বাস।
 
মঙ্গলবার (২ মে) রাতে বরেন্দ্র এক্সপ্রেসের একটি বাস বগুড়ার চার মাথায় পৌঁছালে বাসটি আটকে দেন বগুড়ার শাহ ফতেহ আলী বাসের মালিকের প্রতিনিধিরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই রাতেই নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর এলাকায় শাহ ফতেহ আলীর একটি বাস আটকে দেন নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্যরা। এতে দুই পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এর জেরে বুধবার (৩ মে) সকাল থেকে এই দুই জেলার পরিবহন একে অপরের জেলার ওপর দিয়ে বাস চলাচলের চেষ্টা করলেই তা আটকে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নওগাঁয় থাকা শাহ ফতেহ আলী বাসের সবকটি কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে। বাধ্য হয়ে কিছু বাস নওগাঁ থেকে নাটোর হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। অনেক যাত্রী নওগাঁর শেষ সীমানা সান্তাহার থেকে বাসে উঠে ঢাকা রুটে চলাচল করছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আহসান হাবীব বলেন, জরুরি কাজে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বিকেলের গাড়িতে অগ্রিম টিকিট কেটে রেখেছিলাম শ্যামলী পরিবহনে। নির্ধারিত সময়ে এলে তারা বাস ছাড়েনি। বাস ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত কাউন্টারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এখন বলছে রাতের গাড়িতে সান্তাহার হয়ে পাঠাবে। এত ভোগান্তি হবে জানলে ট্রেনে দাঁড়িয়ে যেতাম।

একই উপজেলর শিকারপুর ইউনিয়নের সরইল গ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে আসা যাত্রী আজিজুল হক একই অভিজ্ঞতার কথা জানান। 

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য যেই বাসে অগ্রিম টিকিট কাটা ছিলো তা এখন আর যাবে না বলে জানিয়ে দিল। টিকিট বুকিংয়ের টাকা ফেরত এনে হানিফ পরিবহনের একটি টিকিট কাটলাম। এই বাস নাটোর হয়ে ঘুরে ঢাকায় ঢুকবে। পরিবহন মালিকদের দ্বন্দ্বে যাত্রী হয়রানি কখনোই আইন সম্মত হতে পারে না। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তিনি।

শহরের ঢাকা বাসস্টান্ড এলাকার শ্যামলী পরিবহনের এনআর কাউন্টারের মাস্টার লিটন বলেন, সকাল থেকে রাত ৮টার মধ্যে ৬টি বাস যাওয়ার কথা ছিল। কোনো বাসই যেতে দেয়নি। যাত্রীদের ভোগান্তি হলেও আমরা নিরুপায়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝুঁকি নিয়ে ৩০ জন যাত্রীসহ একটা বাস বগুড়ার ওপর দিয়ে ছেড়েছিলাম। সেটা বগুড়ায় আটকা পড়ে আছে। এখন ওই যাত্রীদের কীভাবে ঢাকায় পাঠাবো তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে আছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের মালিক বগুড়ার পরিবহন রুট নিয়ন্ত্রণ করেন। এ অবস্থায় নওগাঁ বাস মালিক গ্রুপের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের জেরে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছি আমরা। সকালে বগুড়ায় প্রবেশ করা মাত্র আমাদের বেশ কয়েকটি বাস তারা আটকে দিয়েছে। যেসব যাত্রীর টিকিট অগ্রিম বুকিং করা ছিল তাদের নাটোর হয়ে ঢাকায় নিয়ে গেলে আমাদের বাস আর কোনোদিন বগুড়ার সীমানায় প্রবেশ করতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছেন বগুড়া বাস মালিক সমিতির নেতারা। এখন আমরা পড়েছি উভয় সংকটে। অগ্রিম বুক করা টিকিটগুলো বাতিল করা হচ্ছে। এসব ঝামেলা এড়াতে বাধ্য হয়ে অনেক পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে।

নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমিনুল ইসলামের শাহ ফতেহ আলী নামে অসংখ্য এসি বাস নওগাঁ থেকে ঢাকায় যায়। হঠাৎ করে শাহ ফতেহ আলী আমাদের বাস আটকে দিয়েছে। তাই পাল্টাপাল্টি আমরাও তাদের বাস আটকে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত নওগাঁর কোনো বাস বগুড়ায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কিছু কাউন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে এবং কিছু বাস নাটোর হয়ে ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। সমস্যা সমাধান হওয়ার মতো কোনো পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। তাই বগুড়ার ওপর দিয়ে যান চলাচল কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না।

এ বিষয়ে শাহ ফতেহ আলী বাসের মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি ছিল সাপাহার থেকে আরও একটি বাস চলবে। কিন্তু নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপ তা প্রত্যাখ্যান করে। আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে তারা এসি বাস চালু করেছে। বাস চালানোর বিষয়টি সমঝোতার ভিত্তিতে হয়। তারা আমাদের একটা বাস আটকে দিয়েছে। 

আরএআর