কলসকাঠী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার হুমকি দিচ্ছেন

বিদ্রোহী প্রার্থীকে এলাকাছাড়া করতে তার বাড়িতে অস্ত্রসহ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে। সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের খন্দকার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। 

হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, কলসকাঠী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার হুমকি দিয়ে যাওয়ার পর পরই তার অনুসারীরা লাঠি-দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালায়। 

এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়ির মসজিদও ভাঙচুর করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে। মারধরে আহত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর চাচাতো ভাই হেলাল খন্দকার ও আরেক স্বজন মিলন খন্দকার। তারা শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

জানা গেছে, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ওয়াদুদ খন্দকার টিটু। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পাননি। সেক্ষেত্রে নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়িয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়াদুদ খন্দকার টিটু ঢাকা পোস্টকে মুঠোফোনে জানান, আমি নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোয় আমাকে এলাকাছাড়া করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু আমি রোববার আমার বাড়িতে যাই। সোমবার দুপুরে মুন্না চেয়ারম্যান দলবল নিয়ে এসে হামলা চালায়।

তিনি আরও বলেন, হামলার পর থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ হয়নি এখনো। কতজনকে আসামি করা হয়েছে জানতে চাইলে ওয়াদুদ খন্দকার টিটু তা প্রকাশ করতে চাননি।

ওই বাড়ির বাসিন্দা মরিয়ম খন্দকার বলেন, বাড়ির সামনে ডাক-চিৎকারের আওয়াজ শুনে ছুটে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যানের লোকজন আমার স্বামী হেলাল খন্দকারকে মারধর করছে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। 

ভিডিওতে দেখা গেছে, ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার (মুজিব কোট ও টুপিওয়ালা) তার অনুসারীদের নিয়ে ওয়াদুদ খন্দকার টিটুর বাড়িতে ঢুকছেন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে টিটুর চাচাতো ভাই হেলাল খন্দকার ও মিলন খন্দকার বাধা দিতে গেলে তাদের শাসিয়ে বাড়ির মধ্যে পাঠিয়ে দেন ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার। উত্তেজিতভাবে তিনি খন্দকার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে হাত উঁচিয়ে ইশারা করেন। এর পর পরই লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে। সেখানে ঢুকে তারা কয়েকজনকে মারধর করে আবার বেরিয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা মসজিদের গ্লাস, সিসি ক্যামেরাও ভাঙচুর করে।

মারধরের শিকার হেলাল খন্দকার জানান, চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মুন্না তালুকদারের নেতৃত্বে হাবিব আকন, মেম্বার প্রার্থী মাসুদ সিকদার, মজিদ খান, শহিদুল ইসলাম, জাকির হাওলাদার, মনির শরীফ, জব্বার হাওলাদার, বায়েজিদ হাওলাদারসহ অর্ধশত লোক বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না তালুকদার ঢাকা পোস্টকে জানান, খন্দকার বাড়ির সঙ্গে পাশের হাওলাদার বাড়ির লোকজনের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। হাওলাদার বাড়ির লোকজন দুপুরে হামলা চালাতে যায়। খবর পেয়ে আমি তাদের ঠেকাতে যাই। অথচ খন্দকার বাড়ির লোকজন সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করছেন।

হেলাল খন্দকারকে আঙুল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া এবং ইশারা করার পর হামলাকারীরা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়িতে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এ সময় আপনি কেন রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন এমন প্রশ্নের সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই চেয়ারম্যান প্রার্থী।

এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলাউদ্দিন মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ধরনের কোনো অভিযোগ আমরা লিখিত আকারে পাইনি। পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে নির্দেশনা রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার। আমরা সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি