এক হাজার টাকা না দেওয়ায় প্রধান শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেননি যে শামীমকে তার নামে আরেক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। অর্থাৎ শামীমের নামে প্রবেশপত্র ঠিকই এসেছিল, কিন্তু সেটি তাকে না দিয়ে জালিয়াতি করে আরেকজনকে পরীক্ষার সুযোগ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন জানা যায়, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাঘরা ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. শামীম নামে এক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের অমানবিক পদক্ষেপের শিকার হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। শামীম অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক তার কাছে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা চেয়েছিলেন, সেটি দিতে পারেননি বলে তাকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি। 

চারদিন পর এখন জানা গেল নতুন তথ্য। মো. শামীমের নামে আসা প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন আরেকজন! তার নাম শাওন। শামীম নামে তিনি পরীক্ষা দিয়েছেন। শাওন ঘাঘরা কোনাপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে।

জানা গেছে, শাওন নামে ওই শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। জালিয়াতির মাধ্যমে মো. শামীমের পরিবর্তে এই শাওনকে পরীক্ষার কেন্দ্রে বসার সুযোগ করে দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। শাওনকে সুযোগ দিতেই শামীমের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি।

ঝিনাইগাতী উপজেলার আহমদ নগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের একটি উপস্থিতি শিটের কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। সেটিতে মো. শামীম ও তার বাবা-মায়ের নাম আছে, কিন্তু ছবি আছে কোনা পাড়া গ্রামের শাওনের। ওই শিটের তথ্য অনুযায়ী মো. শামীম (আসলে শাওন) বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তবে ২য় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেননি।

এদিকে, প্রথম পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর শামীমের পরীক্ষা দিতে না পারার বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রেপ্তারের ভয়ে শাওন দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশ নেয়নি বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জালিয়াতি করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শাওনের খোঁজ নেয় ঢাকা পোস্ট। তবে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি এই মহূর্তে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তার বাবাকেও এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

প্রধান শিক্ষকের জালিয়াতির কারণে পরীক্ষা দিতে না পারা মো. শামীম

এ ব্যাপারে আহমদ নগর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী কেন্দ্রসচিব ফজলুর রহমান বলেন, ৪৩১৪৫৯ রোলধারী ছাত্র মো. শামীম প্রথম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। দ্বিতীয় পরীক্ষায় সে অনুপস্থিত রয়েছে।

মো. শামীমের নামে শাওন কীভাবে পরীক্ষা দিল (আয়নাবাজি স্টাইলে) সে বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রসচিব বলেন, আমরা প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডে থাকা ছবির সঙ্গে পরীক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে থাকি। এতে আমরা কোনো গরমিল পাইনি।

তার মানে কি এই যে, রেজিস্ট্রেশন কার্ডেও আগে থেকে শামীমের পরিবর্তে শাওনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল? এ  প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি তিনি।  

জালিয়াতির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক বলেন, দাপ্তরিক কাজ করার জন্য অফিস সহকারী আছেন। রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ, অনলাইনের কার্যক্রম ও প্রবেশপত্র বিতরণ তিনিই করেন। এ ব্যাপারে আমার ওপর মিথ্যা অভিযোগ চাপানো হচ্ছে। কোনো ভুল হলে এবং তার প্রমাণ পেলে আমি অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুল হালিমের ভাষ্য, প্রধান শিক্ষক যা বলেন আমি তাই করি। আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। যা করার তিনিই করেছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, প্রবেশপত্রসহ কাগজপত্র জাল করে অন্য একজনকে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা গুরুতর অপরাধ। আমরা এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে, দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজুয়ান জানান, এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

উবায়দুল হক/আরএআর