কাউন্টার স্থাপন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নওগাঁ-বগুড়া রুটে তৃতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত বুধবার (৩ মে) সকাল থেকে এ রুটে চলাচলকারী দূরপাল্লার বাসের একে অপরের জেলার সীমানা অতিক্রম বন্ধ করে দেন বাস মালিক গ্রুপের নেতারা। পরে বিকল্প পথে এ দুই জেলার যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও শুক্রবার (৫ মে) সকাল থেকে বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ রেখেছেন বাস মালিকরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ঢাকাগামী যাত্রীরা। সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

জানা গেছে, প্রায় ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় কাউন্টার স্থাপন করে বগুড়ার শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের একটি নন এসি বাস ঢাকায় চলাচল করছিল। সাপাহারের যাত্রীদের দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসের। যাত্রীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ওই উপজেলা থেকে নতুন করে আরও একটি এসি বাস চালু করতে চেয়েছিল শাহ ফতেহ আলী পরিবহন। দুই বছর যাবত সেই চেষ্টা চালালেও সাপাহার উপজেলায় নতুন করে আরও একটি বাস শাহ ফতেহ আলী পরিবহনকে চালু করার অনুমতি দেয়নি নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ। 

সম্প্রতি ওই উপজেলা থেকে তিনটি এসি বাস ও একটি নন এসি বাস ঢাকা রুটে চালু করা হয়। এতে আপত্তি জানান বগুড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের মালিক আমিনুল ইসলাম। বাস চারটি আপাতত বন্ধ রেখে একটি বৈঠকের তারিখ ঠিক করেন দুই জেলার পরিবহন মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ। তবে বিষয়টি তোয়াক্কা না করে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ব্যানারে নিয়মিত বগুড়ার ওপর দিয়ে ঢাকায় চলাচল শুরু করে ওই চারটি বাস। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার (২ মে) রাতে বরেন্দ্র এক্সপ্রেসের একটি নন এসি বাস বগুড়ার চার মাথায় পৌঁছালে তা আটকে দেন বগুড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের সদস্যরা। যার পাল্টা জবাব দিতে ওই রাতেই নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর এলাকায় শাহ ফতেহ আলীর একটি বাস আটকে দেন নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সদস্যরা। এতে দুই পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। এর জেরে বুধবার (৩ মে) সকাল থেকে এই দুই জেলার পরিবহন একে অপরের জেলার ওপর দিয়ে চলাচলের চেষ্টা করলেই তা আটকে দেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার (৫ মে) বিকেল ৪টায় নওগাঁ শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গত দুই দিন বিকল্প পথে যাত্রী নিয়ে কিছু বাস ঢাকায় গেলেও তৃতীয় দিনে অনেক কাউন্টারই বন্ধ রাখা হয়েছে। যেসব কাউন্টার খোলা আছে এসব বাসের যাত্রীদের বগুড়ার সান্তাহার সীমানায় গিয়ে বাসে উঠে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং কিছু বাস নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে। এ দুই জেলার বাস মালিকদের দ্বন্দ্বে যাতে রোষানলে পড়তে না হয় সেজন্য অনেক বাস মালিক টিকিটের অগ্রিম বুকিং নেওয়া টাকা যাত্রীদের ফেরত দিচ্ছেন। এতে বাধ্য হয়ে অনেক যাত্রীকেই বাড়ি ফেরত যেতে হচ্ছে।

নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সরাইল গ্রাম থেকে ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আসা যাত্রী তাসলিমা আক্তার বিকেল ৪টা থেকে শ্যামলীর বন্ধ কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ৩০ মিনিট হলো দাঁড়িয়ে আছি, কাউন্টার বন্ধ। লোকজন নেই তাদের। বাস নওগাঁ থেকে চলবে না এটা জানানো হয়নি। চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য ৫টার গাড়ির টিকিট কাটা ছিল। এখন কীভাবে যাব বুঝে উঠতে পারছি না।

নওগাঁ জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসের রুট নিয়ে বগুড়ার আমিনুল ইসলাম যেটা শুরু করেছেন সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। আমরা যাত্রীদের দুর্ভোগে না ফেলে তাদেরকে নাটোর হয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছি। বগুড়া বাস মালিক গ্রুপের কোনো অবৈধ অযৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে সারা বছরই নাটোর হয়ে আমাদের বাস চলাচল করবে। যেহেতু এখনো সমাধান হয়নি। তাই কবে নাগাদ নওগাঁ-বগুড়া রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বগুড়া জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ব্যানারে চালু হওয়া চারটি বাসের বিষয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলাম। ২ মে বিকেলে তারা কোনো বৈঠক করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তখন বাধ্য হয়ে তাদের বাস আটকে দেই। পরে তারাও আমাদের বাস আটকে দেন। নওগাঁর বাস মালিকদের বগুড়ায় ব্যবসা করার ক্ষেত্রে আমরা যতটা আন্তরিক হয়েছি, সেই তুলনায় তারা আন্তরিক হতে পারেনি। তাই বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নওগাঁর বাস বগুড়ায় আসতে দেয়া হবে না। ফেডারেশন থেকে আগামী মঙ্গলবার এ বিষয়ে বৈঠকের নির্দেশনা দিয়েছে। বৈঠকের পর একটি সমাধান আসবে।

নওগাঁর পুলিশ সুপার রাশিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসের রুট নিয়ে নওগাঁ ও বগুড়ার পরিবহন মালিকদের দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই সেটি সমাধানে জেলা পুলিশ কাজ করছে। বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যাটি সমাধান হবে।

আরএআর