খুলনার কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর নজরুল ইসলামকে মারপিট ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক নজরুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, কয়রা উত্তরচক আমিনিয়া বহুমুখী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে ওখানে জটিলতা ছিল। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে আমি যাই। সেখানে যাওয়ার পর বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছিলাম। শুক্রবার দুপুর ২টার সময় লিখিত পরীক্ষা শুরু করি। এরপর ভাইবা নিয়ে খাতা দেখি। মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহমুদ চেয়ারম্যান আমাকে বারবার একটা খাতা নিয়ে বলছিলেন এটা আমার ক্যান্ডিডেট। লিখিত পরীক্ষার সময় তিনি চেষ্টা করেন তার প্রার্থীকে সাহায্য করতে কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে থাকায় পারেননি।

ভুক্তভোগী শিক্ষক আরও বলেন, তবে চেয়ারম্যান একটি খাতা দেখিয়ে বলেন এটা তার প্রার্থীর খাতা। এটা যেন খেয়াল রাখি। আমার সঙ্গে মাদরাসা বোর্ডের ডাইরেক্টর জিয়াউল আহসান ছিলেন। লিখিত পরীক্ষায় ১৪ জনের মধ্যে ৬ জন পরীক্ষা দিয়েছে। সবাই ফেল করেছে। ৩০ এর মধ্যে পাশ মার্ক ১২ কেউ পাননি। তখন ডাইরেক্টর স্যার বললেন ৩ জন পাশ না করলে পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। এ সময় চেয়ারম্যান ৩টি খাতা নিয়ে বলেন, আমরা লিখে দেই। আমি বলি এটা হয় না। চেয়ারম্যান এসে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন।

তিনি বলেন, এরপর ফেরার জন্য ডাইরেক্টর স্যারের প্রাইভেট কারের উঠি। ডাইরেক্টর স্যার সামনে বসেন। পিছনে আমি ও চেয়ারম্যান। প্রথমে আমাকে আঘাত করে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে চেয়ারম্যানের বাড়ির একটু সামনে গাড়ি থামায়। যেখানে আগে থেকে লোকজন ছিল। সেই লোকজন গাড়ির দরজা খুলে আমার উপর আক্রমণ করে মোবাইল নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান বলেন ওকে দেখিয়ে দেব নিয়োগ দিতে এসে নিয়োগ দিবে না কেন? আমাকে মাটিতে ফেলে রাখে। জ্ঞান ফিরে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এক পর্যায়ে আমি চিৎকার করলে ওরা আমার মুখে গামছা বেঁধে রাখে।

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, এর মধ্যে তারা বারবার চেষ্টা করে স্বাক্ষর নিতে, না দিলে মেরে ফেলবে। এক পর্যায়ে আমার মাথায় উপর পিস্তল ও ছুরি ঠ্যাকায়। আমার আঙ্গুল ব্যাথা থাকায় আমি নিয়োগ পত্রে সই দিতে না পারায় ওরা বরফ এনে হাতে দেয়। ব্যাথা কমলে ৪-৫টা কাগজে সই নেয়। সই নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ পাহারায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমাকে আনা হয়েছে। এমন ঘটনায় ওই চেয়ারম্যানের বিচার চাই। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষকের ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম বলেন, ভাইয়ের এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছি। নিয়োগ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করতে এসে তিনি আহত হয়েছেন। হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, মারপিট বা জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই শিক্ষক হাইপ্রেসারের রোগী ছিলেন। পরীক্ষা শেষে আমরা যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি যে হাই প্রেসারের রোগী ছিলেন আমরা জানতাম না। আমার বাসায় যাওয়ার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে যান। তাকে বাসায় নিয়ে আমি নিজে ডাক্তারকে খবর দেই। ডাক্তার এসে তাকে দেখেন, ওষুধ খেতে বলেন। পরে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যাম্বুলেন্স এনে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

তিনি আরও বলেন, উপজেলায় আমার বিপক্ষে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ষড়যন্ত্র রয়েছে। আমার বাড়ির সামনে মারপিট করব আর মানুষ দেখবে না? আমি কি রাস্তা আটকে রেখেছিলাম? আর নিয়োগ বোর্ডের সবাই স্বাক্ষর করেছিল, ওই শিক্ষকের স্বাক্ষর বাকি ছিল। পরে তিনি স্বাক্ষর করেন। জোর করে কোনো স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর নজরুল ইসলামকে মারপিটের বিষয়টি জানতে পেরেছি। রাতেই পুলিশ পাহারায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মোহাম্মদ মিলন/এবিএস