মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আংশিক চালু হলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান সংকটে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ২৬৭ পদের মধ্যে ১০২টি পদই খালি রয়েছে। এতে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে সেবা নিতে গেলে পোহাতে হয় ভোগান্তি।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, লোকবলের অভাবে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালটি।

স‌রেজ‌মি‌নে গি‌য়ে জানা যায়, হস্তান্তরের সাড়ে তিন বছর পর চালু করা হয় মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। বর্তমানে এর আংশিক কার্যক্রম চলছে। কিন্তু হামপাতালের ২৬৭টি পদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ ১০২টি পদ খালি থাকায় কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রেরণ করায় খরচের সঙ্গে বেড়েছে রোগীদের ভোগান্তিও। এতে ক্ষুব্ধ রোগী, স্বজন ও এলাকাবাসী। তবে সিভিল সার্জনের দাবি, ২৫০ শয্যার নয়, এখনো ৩২টি পদ খালি আছে পূর্বের ১০০ শয্যার হাসপাতালে। তাই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না।

সং‌শ্লিষ্ট‌ সূ‌ত্রে আরেও জানা যায়, উচ্চ আদালতের প্রাপ্ত চিঠির পর তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করা হয় মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আংশিক কার্যক্রম। গত ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খান এর উদ্বোধন করলেও এখনো চালু হয়নি এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। তিন কোটি টাকা মূল্যের সিটি স্ক্যান মেশিন, ডিজিটাল এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ১০টি কার্ডিয়াক মনিটরসহ কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভিড় করছেন শত শত রোগী। কিন্তু এখনো মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এতে ক্ষুব্ধ রোগী, স্বজন ও এলাকাবাসী।

মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুরের রাজীব মাতুব্বর তার মা হালানী বেগমকে ভর্তি করেন জেলার হাসপাতালে। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, অসুস্থ মাকে নিয়ে রাতে হাসপাতালে আসছি। সকাল হয়ে দুপুর, এখনো কোনো ডাক্তার পাই নাই। জরুরী বিভাগে কোনো রকম একটু চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করে দিয়েছে, নার্স আসে-যায়, কিন্তু কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। এভাবে চিকিৎসা যদি তারা করে তাহলে আমার মাকে তো বাঁচাতে পারবো না। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের তো সদর হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ নাই। তাই আমরা সদর হাসপাতালে আসি। এখানে যদি এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাহলে আমরা যাব কোথায়?

স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি হাসান শুভ বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল নির্মাণ হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। দ্রুত এখান থেকে সব ধরনের সেবা প্রত্যাশা করছি।

সাহিত্যিক ও ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, পুরোপুরি হাসপাতাল চালু না হলে সব ধরনের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা চাই জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য এটি দ্রুত চালু করা হোক।

নিরাপদ চিকিৎসা চাই মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, দ্রুত এই হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ চালু করা হলে উন্নত সেবা পাবেন জেলাবাসী।

এ ব‌্যাপা‌রে মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহম্মদ খান বলেন, বর্তমানে ১০০ শয্যারই জনবল ঘাটতি রয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল নিয়োগের আবেদন চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে ২৫০ শয্যার নতুন এই হাসপাতালটি।

রাকিব হাসান/এবিএস