‘আমরা এখন কোন পথ দিয়ে ঘর থেকে বের হবো? প্রতিবেশী মিল্লাত শেখ ও তার ভগ্নিপতি ফয়সাল শেখ জোর করে আমাদের যাতায়াতের পথে ঘর তুলে আমাদের বন্দি করে রেখেছে। এখন বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে হলে আমার স্বামীর কবরের উপর দিয়ে বের হতে হবে।’

এভাবেই আক্ষেপ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের করফা গ্রামের মৃত মহসিন গাজীর স্ত্রী পেয়ারা বেগম। এ ঘটনায় পেয়ারা বেগম বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, পেয়ারা বেগম তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর ভিটেয় ৫৭ শতাংশ জায়গার উপর পাকা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। গত কয়েক মাস ধরে একই গ্রামের আব্দুল হাকিম শেখের ছেলে প্রভাবশালী মিল্লাত শেখ ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শ্রীরামকান্দি গ্রামের মৃত লুৎফর রহমান শেখের ছেলে ফয়সাল শেখ ওই বসত ভিটার ৩৮ শতাংশ জায়গা নিজেদের বলে দাবি করেন।

এরই জের ধরে গত শুক্রবার (৫ মে) মিল্লাত শেখ ও ফয়সাল শেখ লোকজন নিয়ে পেয়ারা বেগমের বাড়ির প্রবেশ পথে ঘর তুলে তাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন। ফলে গত তিনদিন ধরে ভুক্তভোগী পরিবারটির ৯ জন সদস্য ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছে না তারা। তবে বাড়ি থেকে বের হতে হলে কবরের উপর দিয়ে যেতে হয় তাদের।

পেয়ারা বেগমের ছেলে মিন্টু গাজী বলেন, আমরা আমাদের পৈত্রিক ভিটেয় বসবাস করছি। এখানে রয়েছে আমার বাপ-দাদার কবর। মিল্লাত শেখ ও ফয়সাল শেখ অবৈধভাবে জোর করে আমার এই বাপ-দাদার ভিটার ৩৮ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তারা সেই রায়কে অমান্য করে জোরপূর্বক ঘর তুলে আমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।

পেয়ারা বেগমের পুত্রবধূ মিম আক্তার বলেন, আমাদের যাতায়াতের পথে ঘর তোলার সময় আমরা বাধা দিয়েছিলাম। এই বাধা উপেক্ষা করে মিল্লাত শেখ ও ফয়সাল শেখ লোকজন নিয়ে জোর করে ঘর উত্তোলন করে। আমরা বাধা দিলে তারা তখন আমাদের মারধর ও জীবননাশের হুমকি দেন। আমরা এই সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিল্লাত শেখের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা পেয়ারা বেগম বা তার ছেলে মিন্টু গাজীর জায়গা দখল করিনি। আমরা গত শুক্রবার আমাদের ক্রয়কৃত জায়গায় ঘর নির্মাণ করেছি। এতে তাদের পথ আটকে গেছে। তবে আমরা আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে বলেছি।

এ বিষয়ে কোটালীপাড়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পেয়ারা বেগমের একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়েছিল। অভিযোগটির তদন্ত করে সত্যতা পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আশিক জামান/এবিএস