সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, ইয়াস, সিত্রাংয়ের পর এবার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। আগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই আবারও ঘূর্ণিঝড়ের খবরে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় উপকূলের মানুষ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ উপকূলে ১৩ থেকে ১৫ মের মধ্যে যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। ফলে গত কয়েক বছরের একাধিক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারা উপকূলের মানুষ আবারও ঝড়ের আভাসে আতঙ্কিত। উপকূলে নদী রক্ষা বাঁধগুলো অরক্ষিত থাকায় ঝড়ে আবারও লোকালয় প্লাবিত হওয়ার অশঙ্কা করছেন তারা।

উপকূলবাসীর দাবি, বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। আবার অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কার চলমান। যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্ট প্লাবন মোকাবিলার সক্ষমতা রাখে না। যদিও পাউবোর দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে জিওব্যাগ দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে।

ইলিশা বেড়িবাঁধের পাড়ে ছোট ঘর করে থাকা আকলিমা বিবি বলেন, গতবার ঘুর্ণিঝড়ে জোয়ারের পানিতে আমগো ঘর ডুবে যায়, রান্না করেও খাইতে পারি নাই পানির জন্য। এহন আল্লাহ জানে আবার কী হয়। ঘূর্ণিঝড় আইলে আমগো অনেক কষ্ট হয়।

এদিকে গত কয়েক বছর যাবত তেঁতুলিয়ার ভাঙনের মুখে পড়েছে ভোলা সদর ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকা থেকে চর চটকিমারা খেয়াঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা।

তেঁতুলিয়া নদীভাঙনে এরই মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি, বিস্তীর্ণ ফসলের খেতসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। হুমকির মুখে রয়েছে একটি মডেল মসজিদ, দুটি বাজার, একটি গ্যাসকূপ, একটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, লঞ্চঘাটসহ হাজারো ঘরবাড়ি। নদীর তীরবর্তী বসবাসরত বাসিন্দাদের কাটছে নির্ঘুম রাত। জোয়ার-ভাটার সময় এখানকার বেশির ভাগ মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়।

লালমোহন উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের সাইফ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ইউনিয়নের বেশ কিছু জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। কোথাও কোথাও কাজ চলছে। প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নিচু বাঁধের ফলে জলোচ্ছ্বাসে তা উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা আছে।

ভবানীপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মনির হোসেন বলেন, আমাদের ইউনিয়নের  মধ্যে ৮নং ওয়ার্ডে মাছঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি ঝুকিপূর্ণ থাকায় সংস্কার করছি। এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। লোকালয়ে যাতে পানি ঢুকতে না পারে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ভোলা সদর রাজাপুর  ইউনিয়নের বাসিন্দা রিয়াজ সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেঘনা নদীর তীরে বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিতে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে  ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো সংস্কার করা দরকার। গতবার নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে অনেক ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভোলা সদর রাজাপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী বলেন, বর্তমানে রাজাপুরের এক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মাটি, বালু ও জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের স্থায়ী সমাধান করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আশা করি তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের বিভাগীয় ১ এর আওতায় ১১৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ কম ঝুকিপূর্ণ। আমরা পুরো বেড়িবাঁধ এলাকায় মনিটরিং করছি। কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হবে বলেও জানান তিনি।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ভোলা জেলার উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ ও সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য আমাদের টিমকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোলাতে সিপিপি ১৩ হাজার ৬০০ জন সেচ্ছাসেবী মাঠে কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে। আমাদের সিপিপি টিমগুলো ২৪ ঘণ্টা মাঠে সর্বদা কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

ভোলা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এস. এম. দেলোয়ার হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব তীব্র হতে যাচ্ছে। আমাদের জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করা হবে। জেলার ৭৪৬টি সাইক্লোন শেল্টার, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিসের পাকা ভবন প্রস্তুতসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিএস