ভাঙ্গছে নদীর তীর। ভাঙ্গছে মানুষের ঘর-বাড়ি। সাজানো গোছানো জীবনে নেমে আসছে দুঃখের অমানিশা। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় কুমার নদে পানি বাড়তে শুরু করায় নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমের আগেই স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের নীলাম্বর্দী গ্রামের বাসিন্দারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেসম্বর্দী যুব উন্নয়ন সমিতি নামের একটি স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয়রা মিলে এক সপ্তাহ ধরে এ কাজ করছেন। প্রায় ১ হাজার মিটার নদের পাড়ে বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেওয়ার কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রায় ৫০০ মিটার পাড়ে বাঁধ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশে কাজ চলামান রয়েছে।

বেসম্বর্দী যুব উন্নয়ন সমিতির ক্যাশিয়ার ও সাবেক ইউপি সদস্য হালিম হাওলাদার বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ প্রায় ৫০টি বসতঘর এরই মধ্যে নদের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ৩০টি বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায রয়েছে। তাই বর্ষা শুরুর আগেই আমরা বাঁশ দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করছি সকলে মিলে। আশা করি সকলের সহযোগিতায় বাশ দিয়ে বাঁধ দিতে পারবো। তাহলে আল্লাহর রহমতে কিছুটা রেহাই পাব।

স্থানীয় হেমায়েত হোসেন হিমু বলেন, বেসম্বর্দী যুব উন্নয়ন সমিতি ও স্থানীয়রা মিলে ভাঙনরোধে কাজ করছে। যাতে বর্ষা মৌসুমে এখানকার প্রায় ৩০টি ঘর রক্ষা পায়। সকলের আন্তরিকতার কারণে আজকে আমরা এই কাজটি করতে পারছি। সকলের আন্তরিকতা না থাকলে আজকে আমাদের মনে হয় এই ৩০টি ঘর তাও রক্ষা করতে পারতাম না।সকলের  সার্বিক সহযোগিতায় এ কাজটি সম্পন্ন করতে পারছি। এখন আমার অনেক আনন্দ লাগছে।

ভুক্তভোগী আজিজুল মজুমদার বলেন, সরকারিভাবে নদী শাসনের বাঁধ না দিলে যেকোনো সময় ভেঙে বেশ কয়েকটি পরিবারকে জায়গা-জমি ঘরবাড়ি হারিয়ে একেবারে সর্ব নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে। তাই বর্ষার আগেই সরকারের কাছে আকুল আবেদন  মজবুত একটি  বাঁধের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।তাহলে হয়তো বেঁচে যাবে বেশ কয়েকটি পরিবার। তাই সরকারের কাছে দাবি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

ভুক্তভোগী রিনা বেগম বলেন, আমার বাড়ি এই নদীতে চারবার ভাঙছে। আমার আর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, একটা স্থায়ী বাধ নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য। তাহলে আমি আমার ছেলে সন্তান নিয়ে থাকতে পারবো। আর না হলে আমার পক্ষে আর যাওয়ার মত কেো জায়গা নেই।

বেসম্বর্দী যুব উন্নয়ন সমিতি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হাওলাদার বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ও মাদারীপুরের সংসদ সদস্য শাজাহান খান সম্প্রতি নদ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা জানিয়েছেন দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা প্রকল্প আসলে বাধ দেওয়া যাবে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি দ্রুত সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাকিব হাসান/এবিএস