বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি শক্তি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মোখা পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

এদিকে বরগুনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি পোল্ডারের ২৪টি স্থানে আড়াই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। মোখা আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে এই বাঁধ বিলীন হয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে। ফলে এসব এলাকার ৪০ গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২২টি পোল্ডারের ২৪টি স্থানে ২ কিলোমিটার ৫৭০ মিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।

যার মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ১০টি স্থানে ১ হাজার ২৫ মিটার, পাথরঘাটায় চারটি স্থানে ৫৮৫ মিটার, বামনায় চারটি স্থানে ৩৪০ মিটার, তালতলী উপজেলায় দুইটি স্থানে ৩১০ মিটার, বেতাগী উপজেলায় দুইটি স্থানে ১৯০ মিটার এবং আমতলী উপজেলায় দুইটি স্থানে ১২০ মিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পালের বালিয়াতলী এলাকার বাসিন্দা আবু হানিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খুব ঝুঁকিতে আছি। বেড়িবাঁধ অনেক দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির পাশে চলে এসেছে। এবারের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে আমার শেষ সম্বলটুকু নদীতে চলে যাবে। এই এলাকার আমরা কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কে রয়েছি।

তালতলীয়া উপজেলার জলভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই এলাকাটি ভাঙনকবলিত। প্রতি বছর এখানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ঘূর্ণিঝড় সিডরে এই অঞ্চলের অন্তত ৫০ জন মানুষ মারা গেছেন। এখন যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে দুর্বল এই বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এই এলাকার অন্তত দশ হাজার মানুষ।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, বরগুনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪টি জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করেছি। আমাদের বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া ছয় উপজেলায় আমাদের ছয়টি টিম গঠন করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে এরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে।

প্রসঙ্গত, সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ কারণে পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ অন্যান্য সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বরগুনায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১৮৫টি, আমতলীতে ১১১টি, তালতলীতে ৫৩টি, পাথরঘাটায় ১২৪টি, বেতাগীতে ১১৪টি এবং বামনায় ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া জেলায় ৯ হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ২৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং ১৪২ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি জরুরি সাড়াদান কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

এমজেইউ