বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ব্যাপক শক্তি সঞ্চার করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ক্রমশই বিক্ষুব্ধ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। ফলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জাল-দড়ি গুটিয়ে তীরে ফিরছেন। ইতোমধ্যে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে শতশত ট্রলার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে আসা আরও শতশত ট্রলার পাথরঘাটার বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও বহু ট্রলার সাগর থেকে ফিরছে বলে জানা গেছে।

পাথরঘাটার চরলাটিমারা এলাকার এফ বি তুলি ট্রলারের মাঝি আবু হোসেন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের গভীরে মাছ শিকার করছিলাম আমরা। এ সময় বৃহস্পতিবার হঠাৎ সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। ঢেউয়ের এত তীব্রতা, আমরা টিকতে না পেরে পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা করি। শুক্রবার বিকেলে ঘাটে এসে পৌঁছাই। আমাদের ট্রলারের সকল মাঝি নিরাপদে আছে।

বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে আসা নোয়াখালীর ট্রলারের জেলে বিজন চন্দ্র বলেন, গভীর বঙ্গোপসাগরে ভয়াবহ ঢেউ ও বাতাস। তাই জাল-দড়ি গুটিয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে আশ্রয় নিয়েছি। ঘূর্ণিঝড় কেটে গেলে আবার সাগরে ফিরব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের অন্তত ৯ জেলার প্রায় তিন হাজার মাছ ধরার ট্রলার পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, মাছের খাল, পদ্মা ও চরদুয়ানী এলাকার বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনো অনেক জেলে গভীর সাগর থেকে তীরের উদ্দেশে রওনা করেছে। অনেক জেলেদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করতে পারিনি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় বরগুনায় মোট ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়াও জেলায় ৯ হাজার ৬১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ২৯৪ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্যোগ পরবর্তী জরুরি ত্রাণ বাবদ ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ১৪২ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহনির্মাণ ব্যয় বাবদ ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা, ২ হাজার কম্বল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি জরুরি সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

খান নাঈম/এবিএস