ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে কন্ট্রোলরুম খোলা, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতকরণ, পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা ও সম্ভাব্য দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য মোট ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সম্ভাব্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিকটবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রস্তুতের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব হিসেবে আকাশ আংশিক মেঘলা রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের মাঝারি বা ভারী বর্ষণ হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় মোখা চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকায় রাঙামাটিতে প্রবল বর্ষণ এবং বর্ষণের কারণে ভূমি ধ্বসের আশঙ্কা করছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে এলাকাগুলো পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তথ্য অফিস ও রাঙামাটি পৌরসভার মাধ্যমে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে লোকজনের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় ডেপুটি কালেক্টর এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ধস ও দুর্যোগকালীন দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনয়ন ও তাদের সার্বিক বিষয়ে কন্ট্রোল রুম থেকে তদারকি করা হচ্ছে।

এদিকে কাপ্তাই হ্রদে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নৌ-চলাচল নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি রাঙামাটি জেলা ইউনিটের যুব উপপ্রধান-১ মুমতাহেনা চৌধুরী বলেন, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ইতোমধ্যেই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা সর্বোতভাবে প্রস্তুত রয়েছি।

এই বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে পার্বত্য অঞ্চলে অতিবর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা সবাই এলার্ট আছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত ও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিদর্শন করে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য শহরে মাইকিং করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ১৩ জুন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড় ধসে ১২০ জন মানুষ মারা যায়।

মিশু মল্লিক/এসএম