শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরের মোল্লার হাটে বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার শুকনা মরিচ। সপ্তাহে দুই দিন অর্থাৎ প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মোল্লার হাটে বিক্রির উদ্দেশে মরিচ নিয়ে আসেন কৃষকরা। প্রতি হাটবারে ৫ কোটি টাকা করে মোট ১০ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয় এই হাটে। এই হাটের শুকনা মরিচ চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ভরা মৌসুমে মোল্লার হাটে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয়।

সখিপুরের মোল্লার হাটে শনি ও মঙ্গলবার এবং গোসাইরহাটে শুক্র ও সোমবার মরিচ বেচাকেনা হয়। উর্বর পলিমাটির জন্য নদীর পাড়ের এই দুই উপজেলায় মরিচের ফলন বেশি হয়েছে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ।

শনিবার (২০ মে) সখিপুরের মোল্লার হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্না এলাকার কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন হাটে। প্রতি কেজি মরিচ ২৮০ টাকা থেকে ৩৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। বাজারের প্রায় ৩০টি পাইকারি দোকানে মরিচ বেচাকেনা হলেও ছোটবড় মিলিয়ে বাজারে ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। বাজারের পাইকাররা জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও কোম্পানির থেকে মরিচ কিনতে আসায় কৃষকদের পাশাপাশি তারাও লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া গতকাল শুক্রবার গোসাইরহাট বাজারেও কৃষকদের মরিচ বিক্রি করতে দেখা গেছে।

চরসেনসাসের কৃষক ইব্রাহীম খলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছর আমি ৮০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আজকে ৩১৫ টাকা কেজি দরে ২১ হাজার ৭০০ টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। এখনো আমার বাড়িতে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মরিচ রাখা আছে। জমিতেও এখন পর্যন্ত মরিচ ফলন হচ্ছে।

আক্তার হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, আমার উৎপাদন করা মরিচ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বাড়ির কাছে বাজার। দাম ভালো পাচ্ছি শুরু থেকে। পোলাপান নিয়ে ভালোই আছি।

কৃষকদের জমির মরিচ তুলে দেওয়ার কাজ করেন বৃদ্ধা আম্বিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষকদের মরিচ তুলে দিয়ে যে মরিচ পেয়েছি তা বাজারের একটি পাইকারি দোকানে ৩০৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। মরিচ তুলে হাতের কাছের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরেছি। এখন আমি মাছ কিনতে পারব।

স্থানীয় আব্দুর রহমান শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কিনে এনে মোল্লার হাট বাজারে বিক্রি করি। এতে আমার যে ব্যবসা হয়, তা দিয়ে আমার সংসার ভালোভাবে চলে যায়।

দিল মোহাম্মদ নামে এক শ্রমিক বলেন, মরিচ কিনে রাখার পর বাজারের ব্যবসায়ীদের কথা অনুযায়ী মরিচগুলো আমরা প্রস্তুত করে ট্রাকে তুলে দিলে কেজি প্রতি আমাদের দুই টাকা দেন। এতে আমাদের প্রতিদিন ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। বাজারের আয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছে।

জাকির এন্ড ব্রাদার্সের মালিক জাকির হোসেন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটবারে প্রতিটি পাইকারি দোকানে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মরিচ বেচাকেনা হয়। এরপর মরিচগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুষ্টিয়া, ফেনি, চৌমুহুনীর পাইকার ও দেশের বড় বড় কোম্পানি ক্রয় করে নিয়ে যায়।

মেসার্স শান্তা এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাবুদ্দিন মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সপ্তাহে দুই দিন হাটবার। প্রতি হাটে গড়ে কমপক্ষে তিন হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। তিন হাজার মণ মরিচের দাম প্রায় সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা। এই বাজারের উছিলায় আমাদের এলাকার ৩০০ থেকে ৩৫০ জন শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার পরিচালনা করছে। বাজারে ঘর সংখ্যা কম থাকলেও ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। মরিচের কারণে বাজারের ডাক ১০ লাখ হয়েছে এখন। এতে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। চারদিক থেকে এই বাজারে মরিচ ও পাইকাররা আসার কারণে বিক্রিও বেশি হচ্ছে।

আবুল হোসেন নামে শ্যামবাজারের এক পাইকার এসেছেন মোল্লার হাটে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকার শ্যামবাজারের আড়তসহ বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমি প্রথমে এই বাজারের নাম শুনেছি। এখানকার মরিচের স্যাম্পল কোম্পানিকে দিয়েছি। এই বাজারের মরিচগুলো অন্য বাজারের মরিচের তুলনায় ভালো। ভালো মরিচ পেতে হলে মোল্লারহাটে আসতে হবে।

মোল্লারহাট ও গোসাইরহাটের মরিচের বাজার সম্পর্কে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি বছর মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ফলন হয়েছে ৯ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন। শরীয়তপুরের ভেদগঞ্জের মোল্লারহাটে ভরা মৌসুমে সপ্তাহে দুই হাটবারে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয়। বর্তমানে প্রতি হাটবারে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হচ্ছে। এই ধারা অভ্যাহত থাকলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি করে বেশ লাভবান হবে বলে আমরা মনে করি।

সাইফুল ইসলাম সাইফ/এবিএস