শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করতে চাই। শুধু তাই নয়, আমরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষার রূপান্তর ঘটাবার জন্য সারাবিশ্বে যে প্রচেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা তার একেবারেই অগ্রভাগে আছি। ইতোমধ্যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছি। তার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সমস্যা-সমাধান করতে শিখবে। তারা মননশীল, মানবিক ও সৃজনশীল মানুষ হবে। 

শনিবার (২০ মে) দুপুরে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন ও নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে এখন প্রতিযোগিতার চেয়ে সহযোগিতার বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে অনেক বেশি। কাজেই আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে শিখতে পারে, তাই এখন শেখার পদ্ধতি একেবারে ভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন, করে করে শেখা এবং যেটা শিখছে সেটা প্রয়োগ করে শেখা। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তাই হবে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা শিক্ষাকে কাজে লাগাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্ব তখনি থাকবে, যখন আপনি আপনাকে পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে পারবেন। সেটা তৈরি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতিগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গিয়ে ছিলাম। আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষা সারাদেশে স্কুল পর্যায়েও একবারে কমে যাচ্ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক কমে যাচ্ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হলেন। তিনি তখন দেখলেন সারাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আগ্রহ একেবারে কমে গেছে। বিজ্ঞান শিক্ষার শিক্ষার্থী খুবই কম গবেষণা নেই বলবেই চলে। তিনি তখন ঘোষণা করেছিলেন ১২টি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবেন। তিনি যে কথা দেন সেই কথা রাখেন। দেশে এখন অনেকগুলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যেন সহজে অংশ নিতে পারে সেজন্যে প্রতিটি জেলায় পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন সঠিক পরিবেশ, গবেষণাগার, পাঠাগারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো থাকে। শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য গড়ে তুলতে হবে। 

দীপু মনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যে হল শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করা।  ভালো মানুষ তৈরি হতে হলে তাকে সকল দিকে মানবিক, সৃজনশীল এবং শিল্প-সংস্কৃতিক মনা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান, আইসিটিসহ সকল চর্চা থাকতে হবে। কাজেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কতগুলো কংক্রিটের বিল্ডিং তৈরি হবে আর শিক্ষার্থীরা আসবে বসবে চলে যাবে তা যেন না হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এই বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। 

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামছুল আলম।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. নাসিম আখতারে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজ বেগম, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুল রহমান জুয়েল, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচ এম আহসান উল্লাহ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ বদরুন নাহার চৌধুরী প্রমুখ।

আনোয়ারুল হক/আরএআর