বিকল্প সেতু ও সড়ক নির্মাণ না করেই সংস্কারের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মুন্সিগঞ্জের ৪ উপজেলার লাখো মানুষ। ফলে ঝুকি নিয়ে ট্রলারে পার হতে গিয়ে বিরম্বনায় পড়েছেন যাত্রীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ-টঙ্গিবাড়ী-সিরাজদিখান হয়ে ঢাকা সড়কের তালতলা গৌরগঞ্জ খালের ওপর কুন্ডেরবাজার বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সংস্কার কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু বিকল্প কোনো সেতু কিংবা সড়ক না করে সেতুটি দিয়ে যান ও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সংস্কার কাজ করায় বিপাকে পড়েুছেন স্থানীয়রা। এতে এ সড়কে জেলার ৪ উপজেলার যাত্রীদের ঢাকায় ও মুন্সিগঞ্জ সদরে যাতায়াত এবং মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

জানা যায়, জেলা সদরের সঙ্গে সিরাজদিখান ও শ্রীনগর, লৌহজং উপজেলার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ সদর এবং রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কুন্ডেরবাজার বেইলি ব্রিজটি দীর্ঘ পঁচিশ বছরেও পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি। ১০০ মিটার দীর্ঘ বেইলি ব্রিজটিতে যানবাহন ওয়ানওয়ে চলাচল করতে হয়। বেশ কয়েকবার কার্গোর ধাক্কায় বেইলি ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রায় এক বছর আগে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে এ পথে মুন্সিগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে গত এক বছর ধরে ওই সেতু দিয়ে হালকা যানবাহন চললেও এ মাসের ১৭ তারিখ হতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সকল ধরনের যানবাহন ও যাত্রী চলাচল।

মুন্সীগঞ্জ টঙ্গীবাড়ি, সিরাজদিখান ও মুন্সীগঞ্জ সদরের একাংশ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য প্রধান সংযোগ সড়ক মুন্সীগঞ্জ-বেতকা-নিমতলী সড়ক। এ সড়কের মধ্যেই এই বেইলি সেতুর অবস্থান। মুন্সীগঞ্জ সদর এবং টঙ্গিবাড়ী উপজেলার যাত্রীরা নিমতলী হয়ে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে খুব সহজে ঢাকায় যেতে পারে। এছাড়া এই সড়ক হয়ে তারা পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যাতায়াত করতে পারে।

আদনান নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, একটি বাইক ট্রলারে পারাপারে ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বাইকের সঙ্গে একের অধিক লোক থাকলে আরও ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ এখানে বাইক পারাপারে ১০ টাকাই বেশি ছিল। বাইক হতে টাকা নিচ্ছে অথচ ট্রলারে উঠানামার জন্য দু-পাশের রাস্তা ঠিক করে নাই।

এ ব্যাপারে অপর মোটরসাইকেল আরোহি রিংকু বলেন, বিকল্প সড়ক না করেই সেতু বন্ধ করে দিয়েছে। সেতুর স্থানে ট্রলার দিয়ে মানুষ পার করছে। টলারে যাত্রী সংকুলন হচ্ছে না। মোটরসাইকেল ট্রলারে উঠাতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তারপর ট্রলারে উঠাতে হচ্ছে মোটরসাইকেল।

এই পথে যাতায়াতকারী অভিজাত দাস ভবি বলেন, মুন্সিগঞ্জের বিভিন্ন থানার সঙ্গে সংযোগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই কুন্ডের বাজার সেতু। এই সেতুটি প্রায় মেরামত করা হয় কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয় না। দেখা যায় কিছুদিন পর পর সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। বর্তমানে বিকল্প সড়ক না করেই সেতুটি সংস্কার কাজ শুরু করা হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করব এই সেতুটির স্থানে যেন পাকা প্রশস্ত কংক্রিটের সেতু দ্রুত নির্মাণ করা হয়।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফাহিম রহমান খাঁন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ  যাওয়ায় এটার সংস্কার কাজ জরুরি হয়ে পড়েছিল। ফলে সেতুটির সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার কাজের জন্য সেতুটি এ মাসের ১৭ তারিখ থেকে আগামী জুন মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এ সেতুর স্থানে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ডিজাইন করে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি এই বছরের শেষের দিকে ওই স্থনে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের টেন্ডার হবে। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি হবে দুই লেনের। যেহেতু সেতুর পাশের সড়ক টু-ওয়ে তাই ওই স্থানে দুই লেনের অধিক প্রশস্ত সেতু নির্মাণ করা হবে।

ব.ম শামীম/এবিএস