ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি

ফেনীর দাগনভূঞাতে প্রতিরাতেই ফসলি জমির মাটি কাটছে একটি চক্র। রাত ৯ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। চক্রটি কোনো কোনো জমিতে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে মাটি কাটছে । এতে আশে পাশের জমির মাটি ভেঙে পড়ে কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দাগনভূঞার ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়। ফসলি জমির মাটি দিয়ে তৈরি করা ইটের চাহিদা বেশি থাকায় ভাটার মালিকরা বিভিন্ন কৌশলে তা নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইটভাটার মালিকরা সরাসরি জমির মালিক থেকে মাটি কেনেন না। এখানে কয়েকটি সিন্ডিকেট জড়িত । এ সিন্ডিকেট জমির মালিক থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটায় দেয়। ইটভাটায় পৌঁছানো পর্যন্ত দায়িত্বে থাকে তারা।

জমির মালিকদের সঙ্গে  কথা বলে জানা গেছে, তারা ২ ফুট মাটি বিক্রি করলেও সিন্ডিকেটরা নিয়ে যাচ্ছে ৩ থেকে ৪ ফুট। এসব চক্রের বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করার সাহস পায়না তারা। প্রশাসনও কিছু বলছেনা বলে তাদের অভিযোগ।

টপসয়েল কেটে নেওয়া হয়েছে

দাগনভূঞা পৌরসভার অবিরামপুর এলাকার কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, ঘনবসতি ও জনবহুল এলাকা অবিরামপুরের ইটভাটায় প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনের চোখের সামনে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে তাদের ইচ্ছে মতো।
কৃষ্ণরামপুর গ্রামের আব্দুল জব্বার বলেন, রাত নামলেই মেশিন দিয়ে গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে । নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।

জানা যায়, উপজেলার আলাইয়াপুর, ইয়াকুবপুর, মাতুভূঞা, বেকের বাজার, বদরপুর, চানপুর, রাজাপুর সিন্ধুরপুর, রামনগর, জগতপুর, ভবানীপুর,শরিফপুর , রামচন্দ্রপুর, বরইয়া, সমাসপুর, কুরাইশমুন্সী, ইত্যাদি এলাকায় রাতের বেলায় মাটি কাটছে চক্রটি।

এলাকাবাসী জানায়, ফেনী জেলার অন্যান্য উপজেলায় যে অভিযান চলে দাগনভূঞাতে সেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয় না। প্রশাসন যদি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করত তাহলে কৃষি জমির মাটি কাটা কমে যেত।

দক্ষিণ চন্ডিপুর এলাকার লাল মিয়া বাড়ির মো. হানিফ মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জমির মাটি বিক্রি করিনি তার পরও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মী জুলফিকার আলম রুবেল প্রকাশ (টাক্কা রুবেল) রাতের অন্ধকারে মাটি কেটে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তদন্তের দায়িত্ব দেন। পরিদর্শন করেও অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

উপজেলার সর্বত্রই এভাবে জোর করে রাতের অন্ধকারে  জমির মাটি কেটে নিচ্ছে মাটি খেকো সিন্ডিকেট। আমারা সাধারণ জনগণ তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি অফিসার রাফিউল ইসলাম বলেন, কৃষি জমির ওপরের অংশের ৬-৭ ইঞ্চির মধ্যে থাকে সবধরণের জৈব গুণাগুণ। যাকে আমরা টপসয়েল বলে থাকি। অথচ কৃষকের অজান্তেই এ জৈব গুণাগুণের মাটি কেটে নিচ্ছে ইটভাটা। এতে ফসল  উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এই টপসয়েল তৈরি হতে ৪০-৫০ বছরের অধিক সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, মাটি কাটার কারণে সময় মতো চাষাবাদ হয় না। জাতীয় পরিসংখ্যান মতে মোট জমির ১% কমে যাচ্ছে। দাগনভূঞায় দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর ইটভাটা থেকে কালোধোঁয়া নির্গত হওয়ার কারণে পানির সঙ্গে  এসিড মিশে বৃষ্টিসহ বিভিন্ন বৃক্ষের পাতা ও ফল উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।

ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফাইজুল কবির বলেন, দাগনভূঞায় পরিবেশ অধিদফদর তথ্যমতে ২৬ টি ইটভাটা আছে। তার মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্রের নবায়ন আছে ১২ টির। ছাড়পত্রের মধ্যে শর্ত আছে কৃষি জমির মাটি দিয়ে ইট প্রস্তুত করা যাবেনা।

তিনি বলেন, লোকবল সংকটের জন্য নিয়মিত সব ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করতে পারিনা। যেসব ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রের নবায়ন নেই তাদের তথ্য বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্রহীন অবৈধ ইটভাটা ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা খবর পেলেই কৃষি জমিতে মাটি কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। এ ধরনের অভিযান সব সময় অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে হবে। কৃষকদের মাটি বিক্রি না করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

হোসাইন আরমান/এমআইএইচ