গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ আর রানিপছন্দে জমে উঠেছে রাজশাহীর বানেশ্বরের আমের হাট। জেলার সবচেয়ে বড় এই হাটে প্রতিদিনিই বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। শুধু গোপাল, লক্ষ্মণ ও রানিপছন্দই নয়, বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ ধরনের গুটি জাতের আম। হাটে পর্যাপ্ত আমের সরবরাহ থাকায় প্রতিদিন শত শত মণ আম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

মঙ্গলবার (২৩ মে) বেলা ১১টায় সরেজমিনে গয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে হাটের ভেতরে ঢুকছে ভ্যান, নসিমন ও করিমন ভর্তি আম। বানেশ্বরে আমের ব্যাপক আমদানি থাকায় হাট বসেছে বানেশ্বর কলেজ মাঠে। তবে সড়কের পাশে কাচারি মাঠে খুচরা কেনাবেচা করছেন অনেকেই। যারা বেশি আম কিনবেন তারা যাচ্ছেন কলেজ মাঠে।

আম বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটে আজ প্রচুর আম উঠেছে। এমন  চিত্র এখন প্রতিদিনের। কারণ এই অঞ্চলের সিংহভাগ আম এই হাটে কেনাবেচা হয়। হাটে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, রানিপছন্দের চেয়ে বেশি উঠেছে গুটি আম। তবে এই আমগুলোর চেয়ে গুটি আমের স্বাদ কম। কোনো কোনো গুটি গোপাল ও রাণির চেয়েও খেতে সুস্বাদু। হাটে গোপালভোগ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে। লক্ষ্মণভোগ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ। গুটি জাতের আম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আম চাষি হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দুই ভাই। আমরা অন্য কোনো কাজ করি না। প্রতিবছর আমের ব্যবসা করি। সারাবছর নিজেদের জায়গা জমি দেখাশোনা করি। আমাদের নিজেদের তিনটা আমের বাগান আছে। এছাড়া আরও চারটা কিনেছি। বাগানে ভালো আম আছে। আমরা মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বানেশ্বর হাটে আম বিক্রি করি। আমাদের যে বাগানগুলো নেওয়া হচ্ছে সেখান গুটি থেকে শুরু করে আশ্বিনা ও ফজলি জাতের আম রয়েছে। সর্বশেষ কাটিমন জাতের আমের গাছ লাগিয়েছি। এতে করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা আম বিক্রি করি। আমরা বাগানের সব গুটি আম বিক্রি করেছি। গোপালভোগ ও লক্ষ্মণভোগ বিক্রি শুরু করেছি। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ মণ করে আম হাটে বিক্রি করি।

নগরীর শালবাগান এলাকা থেকে বানেশ্বর হাটে আম কিনতে এসেছেন সাইফুল ইসলম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাকরির সুবাদে স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। সেখানে আম পাঠাতে হবে। সে (স্ত্রী) খাবে, এছাড়া তার সহকর্মীদের দেবে। সেই কারণে তিন মণ গোপালভোগ আম পাঠালাম। তবে এ বছর আম আকারে ছোট। চাষিরা বলছেন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আম বড় হয়নি। তবে আমি আকারে বড় বড় গোপালভোগ আম কিনেছি। সেগুলো মণ ধরেছে ২ হাজার ২৫০ টাকা। খেতে তুলনামূলক মিষ্টি। রাজশাহীর আমের প্রতি বাইরের মানুষের একটা আলাদা টান আছে। অফিসের কলিগরা আম খেতে চায়। তাই প্রতি বছরই আম পাঠাতে হয়। আমাদেরও ভালো লাগে। তারাও আম খেয়ে আমাদের প্রশংসা করেন। প্রতি বছর শুরুর দিকে ও শেষ দিকে আম পাঠাই।

আম বিক্রেতা নাজিমউদ্দিন বলেন, আমের দাম তুলনামূলক ভালো। এ বছর ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আম আকারে ছোট। কিন্তু একই আছে। আর ঝড় না হওয়ার কারণে প্রতিটা গাছে ব্যাপক আম আছে। আর রাজশাহীর আমের চাহিদা দেশব্যাপি। তাই এই হাট থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রির উদ্দেশে আম নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।

বানেশ্বর আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমের হাট জমতে শুরু করেছে। এখন প্রতিদিনই হাট বসবে বানেশ্বরে। হাটে গোপালভোগ, লখনা, রানিপছন্দ আম বিক্রি হচ্ছে। হাটে বিভিন্ন দামে আম কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতি মণ গোপালভোগ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে। লক্ষ্মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ। এছাড়া গুটি জাতের আম ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাক মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

শাহিনুল আশিক/এবিএস