গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম সরকার রনি। মঙ্গলবার (২৩ মে) সকাল ১০টার দিকে টঙ্গীর নিজ বাসভবনে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। 

শাহনূর ইসলাম সরকার রনি বলেন, বর্তমানে দেশের প্রায় সব জেলার লোকই গাজীপুর সিটিতে বসবাস করেন। এই সিটিতে জনসংখ্যা বাড়লেও নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। অপরিকল্পিত নগরায়নে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এই নগর। এই সিটির প্রথম নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করে ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর কারা অন্তরালে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়। এর ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে গাজীপুরবাসী। সরকারি দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ক্ষমতা ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে দ্বিতীয় মেয়রও তার দায়িত্বকাল অতিবাহিত করতে পারেননি। গত ৫ বছর সিটি করপোরেশনে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে তা এখন তাদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হচ্চে। শত শত কোটি টাকার এই দুর্নীতির ভাগীদার ছিলেন তারা সকলেই। তাদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু না হলে হয়তো আমরা কেউ আজ এ দুর্নীতির চিত্র জানতেই পারতাম না।

তিনি বলেন, আমার বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার প্রতিষ্ঠকাল থেকে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দুইবার চেয়ারম্যান ছিলেন। অপর চাচা মরহুম সাহাজ উদ্দিন সরকার টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। বড় চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে এলাকার উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখে এলাকায় উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেন। পারিবারিক ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই।

শাহনূর ইসলাম সরকার রনি বলেন, অতিরিক্ত কর আরোপের ফলে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান সিটির বাইরে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিসিক এলাকায় শিল্পোদ্যোক্তারা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলেও তাদেরকে দুই থেকে তিন জায়গায় মোটা অংকের মাশুল গুনতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে গার্মেন্টস কারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মালিকরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না, ওয়েস্টেজ ব্যবসার নামে সারা বছরই তাদেরকে জিম্মি করে রাখা হয়। স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ হাসিল না হলে বা তারা কোনো কারণে অখুশি হলে শিল্পে কৃত্রিম শ্রমিক অসন্তোসহ অনাকাঙ্ক্ষিত নানা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ট্যাক্সসহ এসব নানাবিধ বিড়ম্বনার কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। ফলে যে সকল নাগরিক বাড়ি-কলোনী ভাড়ার আয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন করতেন তারা এখন দৈন্যদশায় পড়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে শিল্প ট্যাক্স সহনীয় মাত্রায় নির্ধারণ করবো এবং শিল্পের সকল সমস্যা চিহ্নিত করে একটি শিল্প ও শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবো।

শাহনূরের নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গাজীপুর সিটিকে পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা, নাগরিক সেবা সহজ ও জনবান্ধব করা, যানজটমুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা, নগরীর পূর্ব-পশ্চিমমুখী দুটি রাস্তা নির্মাণ করা, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত স্কুল-কলেজ গড়ে তোলা,  সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য খেলার মাঠ নির্মাণ করা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেওয়া, সুপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের জন্য সুপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প করা এবং মাদক, সন্ত্রাস ও ইভটিজিং মুক্ত নগরী গড়ে তোলা ইত্যাদি।

শিহাব খান/আরএআর