‘মৎস্য অফিসের দেওয়া বকনা বাছুর ফেরত দিয়ে দিয়েছি। এই দুধের বাছুর নিয়ে আমি কী করব? দুদিন পরই এটা মারা যাবে। শুনেছি গরিব জেলেদের জন্য সরকার প্রতিটা বাছুর কিনতে ২৮ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তর আমাকে যে বাছুর দিয়েছে সেটার বাজার মূল্য বড়জোর ১০ হাজার টাকা হবে। তাই আমি আমার বাছুর ফেরত দিতে এসেছি।’ 

ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা জেলে পরান সিকদার। 

দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নলছিটি উপজেলার জেলেদের মাঝে বুধবার (২৪ মে) সকালে উপজেলা অডিটরিয়ামে ১৭টি বকনা বাছুর ও ৮০টি ছাগল বিতরণ করা হয়। প্রতি বকনা বাছুরের বাজারমূল্য ধরা হয় ২৮ হাজার টাকা ও ছাগলের জন্য ২০ হাজার টাকা। তবে এই বিতরণে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দামের সঙ্গে বিতরণকৃত বাছুর ও ছাগলের সামঞ্জস্য না পাওয়ায় অধিকাংশ জেলে সেগুলো ফেতর দিয়ে গেছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের দেওয়া বকনা বাছুর ও ছাগলগুলো বরাদ্দকৃত টাকার অর্ধেক দামেও ক্রয় করা হয়নি। এছাড়া ছাগলের জন্য যে ঘর দেওয়া হয়েছে সেটাও অতি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আর চু্ক্তিপত্র তৈরির কথা বলে জন্য প্রত্যেক জেলের কাছ থেকে ৮৫০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জেলে তাদের ছাগল ও বাছুর নিয়ে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সামনে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের জেলে নুরে আলম বলেন, আমাকে যে ছাগল দেওয়া হয়েছে তার বাজার মূল্য ৭-৮ হাজার টাকার বেশি হবে না। কিন্তু আজ মৎস্য দপ্তরের সামনে এসে অফিসসহ অন্যান্য মারফত জানতে পারলাম আমাদের ছাগল দেওয়ার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তারা আমাদের সহজ সরল পেয়ে ঠকিয়েছে।

এই সময়ে উপস্থিত সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য খোন্দকার মুজিবুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন, যুবলীগ নেতা মাসুম হোসেন জেলেদের অভিযোগ শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য সরকারের বিভিন্ন কাজের বদনাম হয়। সেই সঙ্গে দলেরও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। আশা করি এই দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর যদি সেটা না হয় তাহলে আমরা দুদককে বিষয়টি অবহিত করব। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বকনা বাছুর যাচাইবাছাই করে ক্রয় করা হয়েছে এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। আর স্ট্যাম্পের খরচবাবদ ৩৬০ নেওয়া হয়। এর বেশি যদি কারও কাছ থেকে নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সেটা ফেরত দেওয়া হবে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, অনিয়মের কথা জানতে পেরেছি। বকনা বাছুর ও ছাগল দেখে আমারও মনে হয়েছে দামে কিছুটা গড়মিল আছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরকে