আব্দুর হালিম মাতুব্বর

নিজের আয়ের শেষ সম্বল ভ্যানটি হারিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে কাঁদছেন বৃদ্ধ আব্দুর হালিম মাতুব্বর (৭৬)। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তোফাপুর ইউনিয়নের চাপাতলী এলাকার বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকেলে সদর থানার পাশে বসে কান্না করতে দেখা যায় আব্দুর হালিম মাতুব্বরকে। বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত শনিবার (২০ মে) সকালে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তোফাপুর এলাকা থেকে ভাড়া নিয়ে শহরে আসি। পরে লোক নামিয়ে দিয়ে শহর থেকে বাশতলা বাচ্চু সড়কের দিকে গেলে সড়কের উভয় পাশে যানজট দেখা দেয়। এদিকে কোথা থেকে এক ছেলে এসে বলে, কাকা আপনি এমনিতেই চোখে কম দেখেন, আমাকে আপনার ভ্যানটা দেন রাস্তার যানজট পার করে দিই। আমি সরল মনে ছেলেটিকে ভ্যানটি দিই। কিছুক্ষণ পর যানজট কমলে ভ্যানসহ ওই ছেলেকে আর দেখি না। এদিকে হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি করেও ভ্যানটির আর সন্ধান পাইনি। পরে মাদারীপুর সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার মস্তোফাপুর ইউনিয়নের চাপাতলী এলাকায় বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে ছোট একটি ঘরে থাকেন আব্দুর হালিম মাতুব্বর। তাদের চার ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু কেউ তাদের সঙ্গে থাকেন না। বার্ধক্যের কারণে স্বাভাবিক কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে একমাত্র সম্বল ভ্যান নিয়ে মাদারীপুর শহর ঘুরে বেড়ান। এছাড়া এক চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ এবং আরেকটি চোখ দিয়ে কোনো রকম দেখতে পান। তারপরও দুমুঠো ভাতের আশায় তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে কঠোর পরিশ্রম করে ভ্যান চালান।

সিসিটিভি ফুটেজে এই যুবককে ভ্যানটি নিয়ে পালাতে দেখা যায়

বৃদ্ধ হালিম মাতুব্বর কান্না করতে করতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ভ্যানটি কিনেছিলাম। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়।

এ সময় তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, আল্লাহ আমি তো কোনো অন্যায় করিনি, আমি তো কারও ক্ষতি করিনি, আল্লাহ আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, তুমি আমাকে এত বড় শাস্তি কেন দিলে? আল্লাহ আমি এখন কী করে খাব? কে আমাকে খাওয়াবে? তুমি ছাড়া আমার ভরসার আর কেউ নেই।

আব্দুর রউফের প্রতিবেশী অবেদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসহায় আব্দুর হালিম মাতুব্বর ঋণ নিয়ে ভ্যান কিনেছিল। সেটি চালিয়ে কোনোরকমে সংসার চালাত। ভ্যানটি হারানোর পর থেকে শুধু কান্নাকাটি করছে।

মস্তোফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন খান বলেন, গত শনিবার সকালে হঠাৎ তার (আব্দুর হালিম মাতুব্বর) ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। এ ঘটনায় তিনি ভেঙে পড়েছেন, প্রচুর কান্নাকাটি করছেন। আমাদের সাধ্যের অনুযায়ী তার জন্য চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ভ্যান হারানোর একটি লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দিয়েছেন বৃদ্ধ হালিম মাতুব্বর। আমরা ভ্যানটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

রাকিব হাসান/এমজেইউ