রাজবাড়ীর ৮ জন শিক্ষক জাল সনদে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সনদ জাল করে চাকরি করা শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন-বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) নার্গিস পারভিন, বেলগাছি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) আলম হোসেন, আলহাজ্ব আমেনা খাতুন বিদ্যাপিঠ স্কুলের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো.সোলায়মান হোসেন, বসন্তপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) আবুল কালাম মোল্লা, বকচর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মরিয়ম বেগম, সমাধি নগর আর্য্য সংঘ বিদ্যা মন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) লাবনী মৈত্র, মাঝবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়রের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোহাম্মদ আইয়ুব হোসেন, গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজর প্রভাষক (সাচিবিক বিদ্যা) মো. এনায়েত হোসেন জাকির।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে যে ৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮ শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে সাতজন শিক্ষক সরকারি বেতন তুলেছেন। এর মধ্যে গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজর প্রভাষক (সাচিবিক বিদ্যা) মো. এনায়েত হোসেন জাকির এখনো এমপিও ভুক্ত হননি। তালিকায় তার নাম থাকলেও সনদ জাল নয় বলে দাবি করছেন তিনি। 

গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের প্রভাষক (সাচিবিক বিদ্যা) মো. এনায়েত হোসেন জাকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, যখন যাচাই-বাছাই হয়েছিল তখন আমার নিবন্ধন হয়নি। তাই তখন আমি কলেজ থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমি নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে আবার কলেজে যোগদান করি। যখন যাচাই-বাছাই হয়েছিল তখন আমার নিবন্ধন না হওয়ার কারণে তালিকায় আমার নাম এসেছে। তবে আমার সনদটি জাল নয়। এনটিআরসি থেকে আমার সনদটি যাচাই করলে তারা সনদটি সঠিক পায়।

গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হালিম তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি পাইনি। তবে ফেসবুকে দেখেছি। লিস্টে আমার কলেজের একজন প্রভাষক রয়েছেন। প্রথমে সে যখন নিয়োগ পায় তখন আমি এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম না। তখন তার ঐ নিয়োগটি বাতিল করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সে আবার পরীক্ষা দিয়ে নিবন্ধন করে পুনরায় আবার নিয়োগ পায়।

জাল সনদে চাকরি নেওয়া সমাধি নগর আর্য্য সংঘ বিদ্যা মন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) লাবণী মৈত্রের বক্তব্য নিতে তাকে ফোন করা হলে তিনি তার কলেজ শিক্ষক স্বামীকে কথা বলার জন ফোন ধরিয়ে দেন। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সাংবাদিকদের সঠিক তথ্য জেনে সংবাদ প্রকাশ করার আহ্বান জানান।

সমাধি নগর আর্য্য সংঘ বিদ্যা মন্দির মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারদ কুমার বাছার ঢাকা পোস্টকে বলেন, লাবণী মৈত্র দীর্ঘদিন যাবত আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাল সনদে চাকরি নেওয়া ৬৭৮ জন শিক্ষকের মধ্যে তার নামটাও রয়েছে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পারমিস সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পাড়ছি না।

উল্লেখ্য, জাল সনদের চূড়ান্ত তালিকায় থাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বন্ধ এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করা, অবৈধভাবে গ্রহণকৃত বেতন ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসরের সুবিধা প্রাপ্তি বাতিল করা, যারা স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তাদের আপত্তির টাকা অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করা, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ভাতা-কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ভাতা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নোটিশ দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক ফৌজদারি অপরাধের মামলা দায়ের এবং তাদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

মীর সামসুজ্জামান/এবিএস