পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন কৃষক বাচ্চু শেখ (৩৮)। তার উপার্জনের টাকায় চলতো পুরো পরিবার। সুস্থ থাকাকালীন মাঠে কৃষি কাজ করতেন। এখন তার শরীরের দুটি কিডনিই বিকল। গত দুই বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। প্রতিনিয়তই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। সামান্য ভিটেমাটি ছাড়া যেটুকু জমি ছিলো সব কিছু বিক্রি করে এতোদিন চিকিৎসার খরচ চালিয়েছে পরিবারটি। বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। ফলে দুটি কিডনি নষ্ট ও লিভার অনেকটা ফুলে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের ছোট ভাকলা গ্রামের কাশেম আলীর শেখের ছেলে বাচ্চু শেখ। বাচ্চু শেখ ঢাকা কিডনী ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মো. সাকিব উজ্জামান আরেফিনের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুটি কিডনি নষ্ট হওয়ায় দ্রুত ডায়ালাইসিসসহ কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তবেই বাঁচতে পারে বাচ্চু। এ জন্য প্রয়োজন ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। যা অসহায় পরিবারটির পক্ষে যোগাড় করা কোনভাবেই সম্ভব না। তাই বাঁচার আকুতি নিয়ে সমাজের বিত্তশালীদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বাচ্চু।

সরেজমিনে, বাচ্চু শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাচ্চু শেখের দুটি মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে এবং ছোট মেয়েটির বয়স ৪ বছর। অসুস্থতার কারণে গত ২ বছর যাবত বাচ্চু শেখ কোনো কাজ করতে না পারায় তাদের একবেলা খাবারও জুটছে না।

বাচ্চুর পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০২১ সালের জুলাই মাসে ফরিদপুর থেকে পরীক্ষা করানোর পর বাচ্চু শেখের দুটি কিডনি নষ্ট ধরা পড়ে। এরপর থেকে মাঠে যতটুকু জমি ছিলো তা বিক্রি করে তার চিকিৎসার খরচ বহন করা হয়। এখন শেষ সম্বল হিসেবে তার বসতবাড়ির ৪-৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, বছর দুয়েক আগে টেষ্টে তার দুটি কিডনি নষ্ট হয়েছে ধরা পড়ে। সে অত্যন্ত বিনয়ী, ভালো ছেলে। হঠাৎ করে তার এমন রোগ ধরা পড়ল, যা সত্যিই দুঃখজনক। তার মাঠে যতটুকু জমি ছিলো সেটা বিক্রি করে সর্বত্র চিকিৎসা করিয়েছে। এখন আর তার সামর্থ্য নেই চিকিৎসা করার।

এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে বাচ্চু শেখের স্ত্রী মোছা. ইতি আক্তার বলেন, ঘরে এমন কিছু নেই যেটা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করাব। মাঠে যেটুকু জমি ছিলো তা বিক্রি করে এতোদিন চিকিৎসা করিয়েছি। এখন বাড়ির ৪-৫ শতাংশ জমি আছে। প্রতিদিন ৩০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। ছেলে-মেয়েদের ৩ বেলা খাবারই দিতে পারছি না, ওষুধ কিনব কোথা থেকে। আর চিকিৎসাই বা করাবো কীভাবে?

এ বিষয়ে ছোট ভাকলা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বাচ্চু ছেলেটি অনেক ভালো মনের মানুষ। আমি অল্প কয়েকদিন আগে শুনেছি তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে। অসহায় পরিবারটির পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। আমি তার জন্য সাহায্যের চেষ্টা করব। পাশাপাশি তিনি সমাজের বিত্তবানসহ সকলকে বাচ্চু শেখের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান করেন।

কৃষক বাচ্চু শেখের চিকিৎসার জন্য সাহায্য পাঠাতে তার স্ত্রী’র মোবাইল নম্বর ০১৭৫৩১৪৩৮৩৯ ও বাচ্চু শেখের ছোট ভাইয়ের মোবাইল নম্বর ০১৭৩৮১৩১৩০৫-এ যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন তারা।

মীর সামসুজ্জামান/এবিএস