জয়পুরহাটে একই দিনে পৃথক স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পৃথক দুই স্থানে কর্মসূচির আয়োজন করে জেলা বিএনপির একটি পক্ষ ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। 

জেলা শহরের ২নং স্টেশন রোড রেলগেটের একপাশে দলীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে জেলা বিএনপির একটি পক্ষ জনসমাবেশ করেছে। অপরদিকে রেলগেটের আরেক পাশে জিরো পয়েন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে জেলা বিএনপির একটি পক্ষের জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্ডল। এতে বক্তব্য দেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীম, জয়পুরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব, জেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ারুল হক প্রমুখ।

বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। এই অবৈধ সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তারা তারেক রহমানকে ভয় পায়। তারেক রহমান তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তারা মধ্যরাতে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, জেলে দেওয়া হয়েছে। এ দেশের মাটিতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতিরেখে আর কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমরা বিএনপির নেতারা রাজপথ থেকে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করব।

ফয়সাল আলিম বলেন, এ সরকার মধ্যরাতে ভোটে ক্ষমতায় এসে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। তাই আগামী দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্বে জয়পুরহাটবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। পরিশেষে তিনি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি চান।

অপরদিকে শহরের জিরো পয়েন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের সামনে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট। বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাম্মীম আজিজ সাজ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল দেওয়ান মিলন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

শান্তি সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকায় এলাকায় দুর্গ গড়ে তুলবেন। যাতে করে যারা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে তাদের আমরা সফল হতে দিতে পারি না। প্রত্যেকটি এলাকায় ভোট কমিটি গঠন করতে হবে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সশস্ত্র এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা সুশৃঙ্খল বাহিনী আমরা গড়ে তুলব। এতে করে যারা বিশৃঙ্খলকারী আছে তাদেরকে সুনিশ্চিত জবাব দিয়ে প্রতিহত করব। এ কারণে আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন।

আওয়ামী লীগ প্রমাণ নিয়ে কথা বলে— এই কথা বলে একটি কাগজে প্রিন্ট কপি দেখিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট বলেন, 'কেউ না এলে আমরা একাই নির্বাচন করবো: খালেদা জিয়া।' তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচন করেছেন। আজকে তারা সেই সন্ত্রাস করছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য, কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হলে নির্বাচন ভালো হবে না। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ওই সময় বলেছেন কেউ যদি নির্বাচনে না আসে আমরা একাই নির্বাচন করব। তার কথা ধরে আজকে যদি আওয়ামী লীগ বলে তোমরা নির্বাচনে আসো আর না আসো আমরা নির্বাচন করবই।

তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে সাময়িক দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে গেছে। এটা সবদেশেই। পৃথিবীতে এটা থাকবে না। তবে অন্যান্য দেশের চেয়ে এই দেশে দ্রব্যমূল্য অনেক সীমিত। যার কারণে তাদের সহ্য হচ্ছে না, আমেরিকার সহ্য হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে তোমাদের আমাদের পাশে থাকার দরকার নাই। যদি সম্ভব হয় এই বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাবো যে, তুমি আমেরিকা আমার পিছে ঘুরঘুর করবে, তোমার পিছে আমাকে ঘুরঘুর করতে হবে না।

তিনি আরও বলেন, এই চৌদ্দ বছরে বাংলার মানুষ হরতাল কি চোখে দেখে নাই। অথচ তারা যখন ক্ষমতায় এসেছিল আমরা রাস্তায় বের হতে ভয় পেয়েছি। তারা কখনও গ্রেনেড মারে, কখনও বোমা হামলা মারে, কখনও ভাঙচুর করে। আমরা যেতে পারি নাই। আজকে তারা যে সমাবেশ করছে, মানুষের শান্তি ভঙ্গ করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা সজাগ থাকবো যদি তারা কোন রকম শান্তি ভঙ্গ করবার চেষ্টা করে তাহলে আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব।

একই সময় কম দূরত্বে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুটি সমাবেশকে ঘিরে লোকজনের মধ্যে মৃদু উত্তেজনার ভাব বিরাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত দুটি সমাবেশই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। জেলা বিএনপির আরেকটি পক্ষ আজ বিকেলে সমাবেশ করবে। ওই সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

চম্পক কুমার/আরকে