নিহত কলেজছাত্র সাকিব

বুধবার (২৪ মার্চ) রাত ১১টা। কলেজছাত্র সাকিবের বাবা রিকশাচালক বাচ্চু মিয়ার মোবাইলে ফোন আসে। তাকে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর এলাকার মাতব্বর আওলাদ হোসেন মিন্টু উত্তর ইসলামপুর গ্রামের জামাল স্টোরের সামনে সাকিবকে নিয়ে হাজির হতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর কিছু বলার আগেই প্রতিপক্ষের জামাল মিয়ার পা ধরে মাফ চাইতে বলেন আওলাদ হোসেন মিন্টু। 

মাফ চাওয়ার জন্য মাথা নিচু করে জামালের পায়ে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাকিবের মাথার পেছনে রড দিয়ে আঘাত করেন  শামীম (৩০)। এ সময় দৌড়ে পাশের জামাল স্টোরে ঢোকেন সাকিব। সেখান থেকে সিহাব (২২), জনি (২০), সৌরভ (২০) ও  অভি (১৮)  তাকে টেনে বের করে তার পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত করেন। সঙ্গে চলে কিল, ঘুষি ও লাথি। সাকিবের মা রিনা বেগম ঘাতকদের পায়ে জড়িয়ে ধরে বলেন- ‘বাবা ওকে ছেড়ে দাও, আমরা ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’ কিন্তু তারপরও সাকিবকে ছাড়া হয়নি। একই সঙ্গে তার মা রিনা বেগম ও বাবা বাচ্চু মিয়ার ওপর চলে বর্বর নির্যাতন। 

এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন উত্তর ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রত্যক্ষদর্শী সামসু মিয়া। 

তিনি আরও জানান, পরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে সাকিবের বাবা শরীরে কাপড় পেঁচিয়ে ছেলের রক্ত বন্ধের চেষ্টা করেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হন। পথিমধ্যে সাকিবের মৃত্যু হয়।

নিহত সাকিবের বাবা বাচ্চু মিয়া পেশায় একজন রিকশাচালক। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার ছোট সাকিব। রিকশাচালক বাচ্চু মিয়া শত কষ্টের মধ্যেও সবটুকু দিয়ে ছেলেকে শিক্ষিত করে তুলতে চেয়েছিলেন। সাকিব মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল।

সাকিবের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সাকিবের বোন সাথী আক্তার ও দাদি চন্দ্রবানু বিলাপ করছেন। 

সাথী বলেন, বাবা রিকশা চালিয়ে আমার ভাইয়ের পড়ালেখা চালাচ্ছিলেন।  বাবা বলতেন- সাকিব একদিন বড় চাকরি করবে। তখন আর আমাকে আর রিকশা চালাতে হবে না। আমার মা বলতেন- সাকিব বড় হয়ে সরকারি চাকরি করবে। না হলে ওরে বিদেশে ভালো রাষ্ট্রে পাঠাবো, আমাদের আর অভাব থাকবো না। আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল। 

সাকিবের দাদি চন্দ্র বানু জানান, সাকিবের কাছে আমি প্রায়ই চা খেতে চাইতাম। সাকিব আমায় বলতো অনার্সটা পাস করে নিই, তোমাকে প্রতিদিন চা দিয়ে গোসল করাবো।  

এলাকাবাসী জানায়, করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় সাকিব বাড়ি থেকে বের হতেন না । বাড়িতেই থাকতেন আর মোবাইলে গেম খেলতেন। সাকিব কোনো দিন কারও সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করেনি। 

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর ইসলামপুর এলাকায় সালিস বৈঠকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ইমন হোসেন পাঠান (২৩) ও মাহবুব হোসেন সাকিব (১৯) ঘটনার পর পরই মারা যান। হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার মারা যান আওলাদ হোসেন মিন্টু  (৪০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসা করতে মিন্টু সালিস বৈঠকটি ডেকেছিলেন। সেখানে সাকিবের মা ও বাবাও উপস্থিত ছিলেন। ক্ষমা চাইতে গেলে সৌরভ ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন ইমন, সাকিব ও মিন্টুকে ছুরিকাঘাত করেন। 

ব.ম শামীম/আরএআর