পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পৌরসভায় দুই শতাধিক মৃত ব্যক্তিকে তালিকায় রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, এক ওয়ার্ডের ভোটারকে অন্য ওয়ার্ডের ভোটার দেখানো হয়েছে। এছাড়া তালিকায় রাখা হয়েছে একটি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ শতাধিক ভোটারও। যারা ইতোমধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদে ভোট দিয়েছে।

জানা যায়, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ইউনিয়ন থেকে পৌরসভায় উন্নীত হয় ২০১৬ সালে। সে সময় তাড়াহুড়া করে সীমানা নির্ধারণ করায় ভোটার তালিকা প্রণয়ণে সৃষ্টি হয়েছিল জটিলতা। এরপর গত ১৫ মে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে পৌরসভা নির্বাচনের জন্য পুনর্বিন্যাস করা সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়। ফলে মাত্র ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেওয়ারও নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র চার কার্য দিবসেই ২২ মে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে তা প্রকাশ করে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস। তড়িঘড়ি করে তালিকা হালনাগাদ করায় মাঠ পর্যায়ে তাদের কর্ম তৎপরতা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, সরেজমিনে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে শুধু টেবিলওয়ার্ক করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করায় দুই শতাধিক মৃত ব্যক্তির নাম রয়ে গেছে নতুন এ তালিকায়। অন্যদিকে ইউনিয়নের ভোটার পৌর এলাকায় তালিকাভুক্ত করা ও এক ওয়ার্ডের ভোটারকে অন্য ওয়ার্ডভুক্ত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে অসংখ্য। যার সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

আরেক স্থানীয় ভোটার বলেন, কয়েকদিন আগে ভান্ডারিয়াকে ইউনিয়ন থেকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর নির্বাচন অফিস থেকে একটা খসরা ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। আমার চাচা, ভাই ও ভাতিজা মারা গেছে, তাদের নামও সে তালিকায় আছে। সেখানে এক ওয়ার্ডের ভোটারের নাম আরেক ওয়ার্ডের তালিকায় আছে। আমরা চাই নতুনভাবে সীমানা নির্ধারণ করে মৃত ব্যাক্তিদের নাম বাদ দিয়ে তালিকা করা হোক।

ষাটোর্ধ্ব এক ভোটার বলেন, প্রত্যেক বাড়ি থেকে কয়েকজন করে ভোটার মারা গেছেন। তাদের নাম যদি হালনাগাদ তালিকায় থাকে তাহলে কীভাবে হবে? আমাদের অনেকের ভোট অন্য ওয়ার্ডে চলে গেছে, ফলে ভোট দিতে সেখানে যাওয়া খুবই কষ্টকর একটি বিষয়।

এক নারী ভোটার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার। এখানের সবাইকে চিনি, এখানেই ভোট দিয়েছি। সকল সুযোগ সুবিধা এখান থেকেই পেয়েছি। আমাকে নিয়ে রেখেছে ২ নম্বরের তালিকায়। সেখানে আমি কাকে ভোট দিবো? আমি তো কাউকেই চিনি না।

এদিকে বাড়িতে তথ্য সংগ্রহ না করার অভিযোগ নিয়ে পৌরসভার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা উপজেলা নির্বাচন অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে তার কোনো সুরাহা না করেই পুনরায় একই ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে উপজেলা নির্বাচন অফিস। উল্টো যারা অভিযোগ করেছেন, তারা যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ দিতে পারেনি বলে তাদের নামে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন অফিস। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে এই অভিযোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছেন। তবে মৃতদের বাদ দিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের পুনর্বিন্যাস কারী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ভান্ডারিয়া পৌরসভায় প্রায় ৫২ হাজার বাসিন্দা থাকলেও ভোটার রয়েছে ২১ হাজার। ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে ভান্ডারিয়া পৌরসভা ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বাড়ি না গিয়ে তো তথ্য হালনাগাদের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সময় নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়েই তথ্য নিয়েছি। তবে পৌরসভার সীমানা ঠিক না থাকায় মৃতটা বেশি রয়ে গেছে। এগুলো পরবর্তীতে যখন আবারও হালনাগাদ করা হবে তখন ঠিক করা হবে।

আবীর হাসান/এবিএস