২০১৮ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে না এই নিশ্চয়তা নির্বাচন কমিশন কীভাবে দেবে তা স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়রপ্রার্থীরা। জাতীয় পার্টি মনোনীত ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত সৈয়দ ফয়জুল করিম, জাকের পার্টি মনোনীত মিজানুর রহমান বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার।

শনিবার (২৭ মে) রাতে বরিশাল জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থীদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মত বিনিময়ে এ দাবি তোলেন তারা। নির্বাচন কমিশন ও ইভিএম নিয়ে কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। আরেক স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী কামরুল আহসান রুপম কোনো বক্তব্য দেননি।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস তার বক্তব্যে বলেন, প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছি সিটি নির্বাচন যেন ব্যালটে হয়, ইভিএম-এর ভেতরে কি আছে সেটা দেখতে না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে অনীহা হয়েছে। আর আমরা তো ব্যালটে অভ্যস্ত, তাই সেটাতে নির্বাচন করা যায় কিনা সেটা বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি যে হবে না তার নিশ্চয়তা কমিশন কিভাবে দেবে তা স্পষ্ট করতে হবে। বরিশালের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির নিশ্চয়তা চাই।

তাপস বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির একচোখা আচরণ করছেন। সিইসি বলছেন কোনো অভিযোগ থাকলে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিলেও চলবে। অথচ আমরা অভিযোগ দিলে তিনি তা রাখেন না। বলেন, প্রমাণ নিয়ে আসুন। অল্প কয়েকদিনের নির্বাচনে আমরা প্রমাণের পিছনে দৌড়াব নাকি ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাব? এছাড়া আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলের মহড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ইতিপূর্বে আমরা ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন করেছি, যদি ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন না দিতেই পারেন, তাহলে ইভিএম-এর গেজেট কি হচ্ছে, সেটা প্রকাশ করতে হবে। তিনি ইভিএম সার্কিটের ডিজাইন দেখানসহ ১০টি দাবির কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, এর আগে সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছিল ভোট সুষ্ঠু হবে। কিন্তু ভোট লুটপাট হয়ে যাওয়ার পরে আর নির্বাচন কমিশনকে পাওয়া যায় না। এবারও কি নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব শেষ করবেন?

পাশাপাশি যদি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ও ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন যদি উপহার না দিতে পারেন তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা পদত্যাগ করবেন কিনা সে বিষয়ে জানতে চান। নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনের সচিবের সাথে যেন প্রার্থীরা সরাসরি অভিযোগ করতে পারেন এজন্য তাদের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

এর আগে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিস যেন অনেক বেশি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়ে জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু বলেন, ভোট যেন সুষ্ঠু হয় তা নিশ্চিত করতে হবে কমিশনকে।

স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার বলেন, একজনের ভোট যেন অন্যজন দিতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নির্বাচন সুষ্ঠ হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ২০১৮ সালের ভোট আমরা আর দেখতে চাই না।

২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, আমি ৫ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু ২০২৮ সালের নির্বাচনে নিজের ভোটই নিজে দিতে পারিনি। এই পরিস্থিতি যে আবার হবে না তার নিশ্চয়তা কমিশন নিশ্চিত করবেন। আরো অনেক প্রার্থী অভিযোগ করেন, টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে, বিধি ভেঙে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে, ওয়ার্ডে ৭/৮টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করার কথা জানান।

প্রার্থীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হা‌বিবুল আউয়াল জানান, এখন ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো অবকাশ নেই, কারণ আমরা তফসিল ঘোষণা করেছি। তফসিল ঘোষণার সময় আপনারা যদি ইভিএম-এ নির্বাচন করবেন না এই বলে নির্বাচন বর্জন করতেন তাহলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু নির্বাচন আর কয়েকদিন পরে এখন যদি আপনারা বলেনও তাহলে ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালট সংযুক্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি আপনারা মনে করেন, আমরা খুব অসাধু দুর্নীতি পরায়ণ, ইভিএম দিয়ে আমরা কারচুপি করব, তাহলে কথাটা ঠিক না।

তিনি বলেন, আমাদের ইভিএম সম্পূর্ণ আইসোলেটেড। আর এটা পৃথিবীর আর কোথায় হয়নি যে আপনাকে আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ব্যালট ওপেন করতে হবে। আপনার ফিঙ্গার প্রিন্ট যদি ম্যাচ না করে তাহলে ডিজিটাল ব্যালট ওপেন হবে না, আর ম্যাচ করলে অটোমেটিকালি আপনার ডিজিটাল ব্যালটটি ওপেন হয়ে যাবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করার সর্বশেষ উদাহরণ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। ওখানে যিনি পরাজিত হয়েছেন তিনিও কোনো অভিযোগ করতে পারেননি আর যিনি জয়ী হয়েছেন তিনি আগে বা পরে কখনোই অভিযোগ করেননি। এছাড়া আরও কয়েক জায়গায় নির্বাচনে কোনো পক্ষ এমনকি ভোটাররাও অভিযোগ করতে পারেননি। ফলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান, র‍্যাব-৮ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান, রিটার্নিং হুমায়ূন কবিরসহ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে