বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সাধারণত নির্বাচনের পরে আসে। ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করার পরে যারা চুরির কাজে জড়িত তাদের ওপর আমেরিকানরা নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু এবার নির্বাচনের সাত মাস আগেই এটা দিয়ে দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশে প্রতিদিন ভোট চুরি হচ্ছে। সমাবেশে আসার পথে বাধা দেওয়া, বাস থেকে লোক নামিয়ে দেওয়া, সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার, গুলি করে হত্যা, এগুলো সবই ভোট চুরির অংশ। সাত মাস আগে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বুঝিয়েছে ‘বাপু ভালো হয়ে যাও’। তাদেরকে বার্তা দিয়েছে যে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।’ তারা যদি এই বার্তা গ্রহণ না করে তাহলে পরবর্তী চপেটাঘাত কবে আসবে আমি জানি না।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে বোরবার (২৮ মে) বিকেলে ময়মনসিংহে বিএনপির জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ময়মনসিংহ উত্তর, দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর মাসকান্দা এলাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বা অন্য যে কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করলে আপনারা ছবি তুলে রাখবেন। ব্যক্তির নাম লিখে রাখবেন এবং তারা কী অন্যায় করছে তার প্রমাণ রাখবেন। তারপর আমাদের জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা করবো।

তিনি আরও বলেন, যারা আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে এমন সভা-সমাবেশকে বাধা দেবে, গ্রেপ্তার করবে, বাক স্বাধীনতায় বাধা দেবে, অবৈধভাবে মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করবে, ভয় দেখাবে, সমাবেশে আসার পথে যারা বাস থেকে নামাবে, মিছিলে বাধা দেবে, সভা-সমাবেশে বাধা দেবে তাদের ছবি তুলে রাখবেন, নামের তালিকা করবেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। দেশেও হবে, বিদেশেও হবে। শুধু যে আমেরিকা ব্যবস্থা নেবে তা না, আমরাও ব্যবস্থা নেব। আমরাও তাদের ওপর স্যাংশন দেব। এদের ছবি ফেসবুকে দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেবেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো স্যাংশন এসেছে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, র‍্যাবের ওপর, র‍্যাবের কর্মকর্তার ওপর অর্থাৎ সরকারের ওপর স্যাংশন এসেছে। ইতোমধ্যে বিশ্বগণতান্ত্রিক সম্মেলনে ১০৭টি দেশকে দাওয়াত করলেও বাংলাদেশকে দাওয়াত করেনি। তারা প্রথম চপেটাঘাত খেয়েছে স্যাংশনের মাধ্যমে। বিশ্বগণতান্ত্রিক সম্মেলনে দাওয়াত না করে দ্বিতীয় চপেটাঘাত আর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তৃতীয় চপেটাঘাত করেছে এই সরকারকে। তাছাড়া ছোটখাটো চপেটাঘাত সব সময়ই খেয়ে যাচ্ছে। তারা চপেটাঘাত খাচ্ছে এটা তাদের বিষয় কিন্তু এতে বাংলাদেশের মানসম্মানের হানি হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আজকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জনগণের নিরাপত্তা না থাকার কারণে এই স্যাংশন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসছে।

আমীর খসরু আরও বলেন, মানুষ আজ মানবাধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, জীবনের নিরাপত্তা, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে নেমেছে। এই আন্দোলন বিএনপির একার নয়। এই আন্দোলন বাংলাদেশের সবার আন্দোলন। এখন এটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সমস্যা আন্তর্জাতিকীকরণ হয়ে গেছে। পুরো বিশ্ব আজ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।

আওয়ামী লীগের এখন রাজনীতিক অস্তিত্ব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগকে এখন আওয়ামী লীগাররা চালায় না। আওয়ামী লীগকে এখন চালায় পুলিশের একাংশ, যারা আওয়ামী মার্কা পুলিশ। আওয়ামী লীগকে চালায় সরকারের আওয়ামী মার্কা সরকারি কর্মকর্তা, কতিপয় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। এরপর কী একটা দল থাকে? রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ দলটি সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়ে গেছে। আর বিএনপি আজকে বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী দল। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিটি কর্মসূচিতে লাখ লাখ মানুষ বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছে। তাই আগামী দিনে আওয়ামী লীগের পরাজয় সুনিশ্চিত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আমার অনেক আস্থা। তারা জীবন দিয়েছে, পরিবার, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে, পঙ্গু হয়েছে কিন্তু কেউ থামেনি। ওরা যত জুলুম-নির্যাতন-গ্রেপ্তার করবে বিএনপি তত শক্তিশালী হবে। আরও বেশি মানুষ রাস্তায় নামবে।  

এর আগে বিকেল ৩টায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের আরোগ্য কামনা করে দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে শুরু হয়। মোনাজাতের আগে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে থাকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলার ১৩টি উপজেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা ও সমর্থকরা এ জনসমাবেশে অংশ নেন। 

এ জনসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুল আলম প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ।

উবায়দুল হক/আরকে