খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চার মেয়র প্রার্থী জনতার মুখোমুখি হয়েছেন। সোমবার (২৯ মে) দুপুরে নগরীর হোটেল সিটি ইনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রার্থীরা জলাবদ্ধতা মুক্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আধুনিক ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।
  
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাগরিক নেতারা বলেন, নগরীতে এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। অনেক সড়ক ভাঙাচোরা। সব ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। অলিগলিতে পর্যাপ্ত সড়ক বাতি নেই। পার্কগুলোর অবস্থা বেহাল। পানি নিষ্কাশনের ২২টি খাল অবৈধ দখলে রয়েছে। দীর্ঘদিনেও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।

বক্তারা বলেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠান করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের বড় কোনো হল নেই। বস্তিগুলোতে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ নেই। নগরীতে বছরজুড়েই থাকে মশার উপদ্রব। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান এখনো কাঙিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এছাড়া নগরীতে আরও অনেক দুর্ভোগ রয়েছে।

বক্তারা বলেন, রাজশাহী নগরীর বেশ কয়েকটি সড়ক সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। কিন্তু খুলনায় তা নেই। একটি বড় দল প্রার্থী না দেওয়ায় এবারের নির্বাচন এখনো পর্যন্ত উৎসবমুখর হয়নি।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, নগরীতে যেসব দুর্ভোগের কথা নাগরিক নেতারা তুলে ধরলেন সেগুলো নিরসনে কাজ চলমান রয়েছে। উন্নয়ন কাজগুলো শেষ হলে বেশ কয়েকটি দুর্ভোগ নিরসন হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে। তবে নগরীর পানি ভৈবর ও রূপসা নদী দিয়ে নিষ্কাশন হয়। এ দুটি নদীর তলদেশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এ দুটি নদী খনন করা প্রয়োজন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি এই কাজে সম্মতি দিয়েছেন। ভেঙে ফেলা পাবলিক হলের স্থানে বহুতল সিটি হল নির্মাণের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।  

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। খালগুলো অবৈধ দখলে থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে পারে না। তরুণরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তিনি মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও বেকারত্ব দূর করার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন।  

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু প্রশ্ন তোলেন গত ৩০ বছর যারা মেয়র ছিলেন তারা কেন নগরীর দুর্ভোগগুলো নিরসন করতে পারলেন না? আর কতকাল নাগরিক নেতারা জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন?

তিনি বলেন, নগরীর ময়ূর নদীর পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়ানো যায় না। নগরীতে ভালোমানের পাবলিক টয়লেট নেই। পাবলিক হল ভেঙে সেখানে নতুন কোনো হল নির্মাণ করা হয়নি। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে পর্যায়ক্রমে সব নাগরিক দুর্ভোগ নিরসন করবেন।

জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন বলেন, ড্রেন ও সড়কের ময়লা-আবর্জনা ঠিকমতো অপসারণ করা হয় না। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে সব সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুশীলন-এর প্রধান নির্বাহী মো. মোস্তফা নূরুজ্জামান। বক্তব্য দেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, নাগরিক নেতা শাহীন জামাল পন, মিনা আজিজুর রহমান ও অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার, খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল, গ্লোবাল খুলনার আহ্বায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, ইসমত আরা হীরা প্রমুখ। 

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর