প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনতে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৫৪টি বাড়িতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

এতে কৃষি বিভাগের প্রদর্শনী হিসেবে প্রত্যেক কৃষককে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, করলাসহ ২৫ জাতের সবজির বীজ ও ফলের চারার জন্য বাগান তৈরির আনুসাঙ্গিক সার, বীজ সংরক্ষণ পাত্র, নেট, সাইনবোর্ড ও গাছের চারা দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। আর কৃষকের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে তাদের পুষ্টি সম্মত সবজি চাষে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান।

জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বাড়ির পাশে বাগ-বাগিচা, শাক-সবজির চাষ, ফুল দেবে, ফল দেবে, পুষ্টি বারো মাস এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ উপজেলায় গড়ে উঠেছে পুষ্টি বাগান। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বসতবাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে তৈরি করা হচ্ছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান। এমন ২৫ জাতের শাক-সবজি চাষ ও ফলের চারা লাগিয়ে আলোর মুখ দেখছেন উপজেলার ১৫৪টি কৃষক পরিবার।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা রোগ ও পোকা থেকে রক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে ও সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে সার্বিক সহায়তা করছেন।

উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের তোরাপ শেখের পাড়া এলাকার কৃষক মো. হুমায়ন আহম্মেদ জানান, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পারিবারিক পুষ্টি বাগান করার জন্য একটি প্রদর্শনী পেয়েছেন। সেখানে তিনি সবজি চাষ করে নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

উজানচর ইউনিয়নের কৃষক সিরাজুল হক বলেন, আমার বাড়ির আঙিনায় কৃষি অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সবজি চাষ করেছি। বেশ কিছুদিন ধরে বাজার থেকে আমাকে শাকসবজি কিনতে হয় না। তাছাড়া অনেক সবজি আমি বাজারে বিক্রিও করেছি। সবজিগুলো অনেক স্বাদের।

গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ সে অনুযায়ী আমরা পারিবারিক সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বসতবাড়ির আঙিনায় অনাবাদি ও পতিত জমিতে প্রকল্পের সহযোগিতায় উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সবজি, মসলা ও ফল উৎপাদনের প্রচেষ্টায় পুষ্টিবাগানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯১টি পরিবারের মাঝে পুষ্টিবাগানের প্রদর্শনী করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৫৪টি কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর সবজি ক্ষেত তৈরি, চারদিকে বেড়া দিয়ে পরিচর্যার জন্য প্রতি কৃষককে সবজি চাষের জন্য বিনামূল্যে লেবু, মাল্টা, পেয়ারা, আম,বড়ই, লাউ, সিম, ঢেঁড়স, ডাটা, ধনিয়া, চিচিংগা, পুই শাক, কলমি শাক, লাল শাক, পালং শাক, পেঁপে, মুলা, করলাসহ ২৫ ধরনের সবজি বীজ ও ফলের চারা দেয় কৃষি অফিস। এসব বীজ ও ফলের চারা রোপণ করে কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমি এখন সবুজে পরিণত হয়েছে। যা পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারগুলোতেও।

মীর সামসুজ্জামান/এবিএস