দুই বেলা দুমুঠো খেয়ে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এক যুগ ধরে পায়ে হেঁটে রাস্তায় রাস্তায় বাদাম বিক্রি করেন বুলবুলি বেগম। স্বামী ১০ বছর ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকায় দুই ছেলেসহ চারজনের পুরো সংসার চলছে শুধু বুলবুলি বেগমের বাদাম বিক্রির টাকায়। জীবন সংসারে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা বুলবুলির একমাত্র ভরসা বাদামের থলি।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর সদর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের বাদশা মিয়ার স্ত্রী বুলবুলি বেগম। বাদশা মিয়া দীর্ঘ ১০ বছর ধরে স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পরে রয়েছেন ঘরেই। বড় ছেলে পড়াশোনা করেন বরিশাল ইসলামিয়া কলেজে আর ছোট ছেলে পড়াশোনা করছেন স্থানীয় একটি স্কুলে। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলেন বুলবুলি বেগম।

বুলবুলি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার পুরো জীবনটাই একটা সংগ্রাম। আমি বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামীর সঙ্গে দোকান চালাতাম। জীবনে শান্তি বলতে কি তা কখোনোই পাইনি। কারণ আমরা খুবই অসহায় এবং গরীব। নুন আনতে পান্তা ফুরায় আমাদের সংসারে। কোনো রকম টানাপড়েনের মধ্যদিয়ে চলছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ আমার স্বামী স্ট্রোক করে বিছানায় পরে আছে।

তিনি আরও বলেন, থাকার জন্য এক টুকরো জমিও নেই আমাদের। মানুষের বাসায় ভাড়া থাকতে থাকতে জীবন পার করতেছি, হয়তো একদিন এই ভাড়া বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবো।

বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা সঙ্গে নিয়েই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বুলবুলি বেগম। জীবনের অধিকাংশ সময় চোখের জ্বলে আঁচল ভেজালেও জীবনের শেষ সময়ে এসে অসুস্থ স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে নিজের একটি ঘড়ে থাকতে চান তিনি।

তরুণ সমাজসেবক জহিরুল ইসলাম মিরন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুলবুলির মত অনেক সংগ্রামী মা আমাদের সমাজে রয়েছেন, যারা নিজের জীবনের সব সুখ শান্তির কথা না ভেবে পরিবারের সুখের জন্য সারাটা জীবন উৎস্বর্গ করে দিয়েছেন। আমার দাবি, বুলবুলি বেগমের যেন নিজের একটা আপন ঠিকানা হয়।

এ বিষষে মহিপুর সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফজলুল হক গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুলবুলি বেগম একজন পরিশ্রমী নারী। আমি তাকে গত প্রায় ১২ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করতে দেখছি। অসুস্থ স্বামী এবং দুই ছেলে নিয়ে সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তিনি। তবে সামনের দিকে কোনো বরাদ্ধকৃত ঘড় এলে, তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবো।

এবিএস