প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতন

শরীয়তপুরে বিদ্যালয়ের আঙিনায় প্রস্রাব করায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এমনকি ওই শিক্ষার্থীর পরিবার দুই দফা পিটিয়ে আহত করার বিষয়টি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষার্থীকে টিসি দেন প্রধান শিক্ষক।

ঘটনাটি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জিহাদ চৌকিদার (১৬) নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর ইউনিয়নের হরকরা গ্রামের রুবেল চৌকিদারের ছেলে। বর্তমানে সে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) হাসপাতালে কথা হয় জিহাদ, তার বাবা রুবেল চৌকিদার ও মা রিমা বেগমের সঙ্গে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে নড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রীদের ওয়াশরুম ঠিকঠাক থাকলেও ছেলেদের ওয়াশরুমটি ভাঙাচোরা ও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে ছেলেরা সাধারণত বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের পেছনে পরিত্যক্ত জায়গায় প্রস্রাব করে থাকে। গত সোমবার (২৯ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে জিহাদ ওই  জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতনের নজরে পড়লে তিনি জিহাদকে ডেকে নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকেন। পিটুনি খেয়ে জিহাদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কঞ্চি ভেঙ্গে গেলে সেখান থেকে থাপ্পড় দিতে দিতে জিহাদকে অফিস রুমে নিয়ে যান এবং সেখানেও তাকে মারধর করেন। পরে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। এতে জিহাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয় এবং প্রস্রাবের রাস্তায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

পরে জিহাদ বাড়ি চলে গেলে তার পরিবারের লোকজন তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার ও মা রিমা বেগম বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহীদুল আলম রতন হাওলাদারের কাছে অভিযোগ করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতন জিহাদের বাড়িতে লাল টিসি পাঠিয়ে দেন। যাতে জিহাদ অন্য কোনো বিদ্যালয়েও ভর্তি হতে না পারে। এ ঘটনায় ন্যায্যবিচার দাবি করে জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার নড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জিহাদ চৌকিদার ঢাকা পোস্টকে বলে, অনেক ছেলেরা সেখানে প্রস্রাব করলেও কাউকে কিছু না বলে প্রধান শিক্ষক শুধু আমাকে পিটাতে পিটাতে তিনটি বাঁশের কঞ্চি ভেঙে ফেলেন। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের দপ্তরি আমাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসে। তারপরও তিনি আমাকে চড় মারতে মারতে অফিসে নিয়ে যান এবং আবারও মারধর করেন। এ সময় প্রধান শিক্ষক আমাকে গালাগালি করে বলেন, ‘তোর মতো পোলা আমি জায়গায় জন্ম দিই। তুই আমারে চেনোস, আমি তোর লাইফ শেষ করে দেব।’ পরে তিনি আমার বাড়িতে লাল টিসি পাঠিয়ে দেন।

জিহাদ আরও বলে, আমাকে মারধর করেছে তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু তিনি আমাকে লাল টিসি দিলেন কেন? আগামীতে আমার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা। আমি এখন কী করবো? আমি কি এখন অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। 

এ সময় জিহাদের বাবা রুবেল চৌকিদার ও মা রিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে কী এমন অপরাধ করেছে যার কারণে এভাবে মারধর করল এবং বাড়িতে টিসি পাঠিয়ে দিল? আমরা এর ন্যায্যবিচার চাই।

এ বিষয়ে বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিহাদ উচ্ছৃঙ্খল টাইপের ছেলে। সে যেখানে-সেখানে প্রস্রাব করে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করে। সে কারও কথা মানে না। সে শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াদবি করে। এজন্য তাকে শাসন করেছি এবং ভয় দেখানোর জন্য টিসি দিয়েছি। সে যদি ভালোভাবে পড়াশোনা করার প্রতিজ্ঞা করে তাহলে তাকে আবার সুযোগ দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিঝারী উপসী তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ নুরুল আমিন রতনের বিরুদ্ধে রুবেল চৌকিদার নামে এক অভিভাবক তার ছেলেকে মারধরের অভিযোগ দিয়েছেন। যেহেতু ছাত্র-শিক্ষকের বিষয়, তাই তদন্ত সাপেক্ষে যা করলে ভালো হবে আমরা সেই ব্যবস্থাই গ্রহণ করবো।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শংকর চন্দ্র বৈদ্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমজেইউ