ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বিভাগদী শহীদস্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা গ্রহণের জন্য নগদ ও বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর হ্যাক করে কৌশলে অন্য নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপবৃত্তিভোগী শিক্ষার্থীদের টাকা উত্তোলন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় অভিভাবকরাও পড়েছেন বিপাকে।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট্রের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ও সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। লিখিত এ অভিযোগ দেন ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলাম।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ৮১ জন শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট্রের সমন্বিত উপবৃত্তির জন্য আবেদন করেন। যাছাই-বাছাই শেষে ৬১ জন শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তির আবেদন অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আবেদন করার সময় সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে সঠিকভাবে ডাটা এন্ট্রি করলেও অনুমোদনকৃত ৬১ জনের মধ্যে ৪৪ জন শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট নম্বর ও অভিভাবকদের নাম ভুল এসেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাসওয়ার্ড হ্যাকাররা হ্যাক করে অন্যদের নামে অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অভিভাবকদের নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন এলাকার কথিত ব্যক্তির নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে অনুমোদিত ৪৪ জন শিক্ষার্থী তাদের উপবৃত্তির টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

সমস্যার উদাহরণ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সেতু সরকারের উপবৃত্তির টাকার জন্য তার বাবা গোসাই মালোর নামে (বিকাশ নম্বর-০১৭৩৪১৮৮***) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু অনুমোদিত পত্রে দেখা যায়, সেতুর বাবার অ্যাকাউন্ট নম্বর হ্যাক করে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বড় টেংরা গ্রামের চাঁন মিয়া ব্যাপারীর নামে তার ব্যবহৃত (০১৭১০২৫২***) এই নগদ নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একাদশ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ শেখের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য তার মা পারভিন বেগমের নামে (বিকাশ-০১৭৫৯৬২৭***) নম্বরে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু অনুমোদিত শিটে দেখা যায়, আব্দুল্লাহর মায়ের অ্যাকাউন্ট নম্বর হ্যাক করে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার শ্রীকলা গ্রামের মো. খেরসেদ আলীর (০১৭৪০৫৫১***) এই নগদ নম্বরে অ্যাকাউন্ট দেখানো হয়েছে। এভাবেই কলেজের একাদশ শ্রেণির ৪৪ জন শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে।

সালথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিনয় কুমার চাকী বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক কার্যালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। এ তালিকা স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট্রের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক দায়িত্ব। এখানে আমাদের সংশোধন কিংবা সংযোজন বা বিয়োজনের কোনো সুযোগ নেই। ওই প্রতিষ্ঠানকে ঢাকায় যোগাযোগ করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আসলে শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট। অ্যাক্যাউন্ট হ্যাক কিনা বা কোনো ভুল আছে কিনা সেটা কীভাবে কি হলো, বিষয়গুলো তারাই খতিয়ে দেখবেন। 

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট্রের সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালককে বিষয়টি সমাধানের জন্য অবহিত করা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা চলছে।

জহির হোসেন/এমএএস