আর মাত্র আট দিন পরেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোট। ইতোমধ্যে হেভিওয়েট তিন প্রার্থী চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাগযুদ্ধে উত্তাপ ছড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। 

শনিবার (৩ জুন) দিনভর প্রার্থীদের গণসংযোগে নগরীর উন্নয়নে যেমন আশ্বাস ছিল তেমনি কড়া সমালোচনাও উঠে এসেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ নগরবাসীকে সকল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। বিপরীতে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের ইকবাল হোসেন তাপস এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিম নৌকাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আবার বাবার ভোটব্যাংকে ভর করে নির্বাচনে আসা টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন অভিযোগ তুলেছেন, নৌকার পরাজয় জেনে কর্মীদের তুলে নিচ্ছে পুলিশ। প্রচারণায় তাপস, ফয়জুল করিম ও রুপন নৌকার বিরুদ্ধে একই সুরে কথা বলছেন।

সাবেক মেয়রের সমালোচনায় আবুল খায়ের

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে উঠান বৈঠকে বলেছেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সেবার মান খুবই খারাপ। যোগ্য পরিচালনার অভাবে চরম অব্যবস্থাপনায় রয়েছে। মানুষ বিগত ১০ বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। বাসিন্দারা বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারছে না। নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমি নির্বাচিত হতে পারলে এসব সমস্যার সমাধান করা হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করা হবে। 

উঠান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করীম, ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার প্রমুখ।

গুমকারী ও খুনিদের বরিশালে ভোট নেই

জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, যারা বিরোধী দলকে রাজনীতি করতে সুযোগ দেয় না। নির্বিচারে হামলা, মামলা আর গুম-খুনের রাজনীতি করে তাদের ভোটের মাধ্যমে জনগণ জবাব দেবে। গুমকারী ও খুনিদের বরিশালে ভোট নেই। গাজীপুরবাসী ভুল করেনি, বরিশালবাসীও ভুল করবেন না। আমি বিশ্বাস করি ভোটাররা ভোট দিতে পারলে নৌকা আর জেগে উঠবে না। 

তিনি বরিশালবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বরিশালে বিগত দিনে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আপনারা রাগ করে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। নির্বাচন থেমে থাকবে না। এজন্য ভোটের দিন কেন্দ্রে এসে ব্যালটের মাধ্যেমে জবাব দেবেন। নগরীর সদর রোড, কাকলীর মোড়, আগরপুর রোডে গণসংযোগকালে এই আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, রফিকুল ইসলাম গফুর, এসএম রহমান পারভেজ, অ্যাডভোকেট এমএ জলিল, নজরুল ইসলাম হেমায়েত প্রমুখ।

নৌকার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, নৌকার মালিক তুই আল্লাহ’ বলে স্পষ্টতই ধর্ম অবমাননা করা হচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় ধর্মকে ব্যবহার করে আমরা রাজনীতি করি। আসলে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করি না, কারণ আমরা সব সময়ই ধার্মিক। যারা অন্য সময় ধর্মের খবর রাখেন না কিন্তু নির্বাচন এলে টুপি পড়ে মসজিদে-দরবারে দৌড়ায়, মূলত তারাই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে। যারা নির্বাচন এলে আলেম-ওলামাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেয় তারাই মূলত ধর্ম ব্যবসায়ী। তিনি এসব অবমাননাকারীদের হুঁশিয়ার হয়ে যেতে বলেন। সেই সঙ্গে ভোটারদের ১২ জুন কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে অবমাননাকারীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। 

নগরীর মহসিন মার্কেট ও সিটি মার্কেট এলাকায় গণসংযোগকালে এসব কথা বলেন হাতপাখার প্রার্থী। তার সঙ্গে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বরিশালে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত

এদিকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন বলেছেন, সরকার জেনে গেছে বরিশালে নৌকার পরাজয় নিশ্চিত। এজন্য তারা আমার নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এয়ারপোর্ট থানার প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ককে বিনা কারণে ধরে নিয়ে একটি অজ্ঞাত আসামির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।

তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা যেন ঘরে থাকতে না পারে সেজন্য পুলিশ দিয়ে হয়রানি শুরু করে দিয়েছে। সরকার জানে নৌকাকে মানুষ ত্যাগ করেছে।

বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি রুপন জড়িত না থাকলেও তার বাবা মরহুম আহসান হাবিব কামাল ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। বরিশালে বিএনপির ভোটব্যাংক কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েই মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রুপম।

প্রসঙ্গত, আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে সাতজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে চারজন ভোটারদের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচিত।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর