দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে উত্তরের জেলা নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে রাজধানী পর্যন্ত দিনের বেলায় চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন। রোববার (৪ জুন) সকাল ১০টায় গণভবন থেকে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময়ে চিলাহাটি রেলস্টেশন চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে কাঙ্ক্ষিত দিবাকালীন ট্রেন পেয়ে খুশি হলেও নামকরণ নিয়ে হতাশ নীলফামারীর বাসিন্দারা। ট্রেনটির প্রস্তাবিত নাম ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ পুনর্বহালের দাবি মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সড়ক ও রেললাইন অবরোধ করেন নীলফামারীর বাসিন্দারা। পাশাপাশি নীলফামারীর চারটি স্টেশনের জন্য আসনসংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জেলাবাসীর।

২০০৭ সালে সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন রুটে যাত্রা শুরু করে ‌‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেন। পরে ২০১৫ সালে চলাচল শুরু করে চিলাহাটি থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত। নৈশকালীন এই ট্রেন চালুর পর থেকেই দিবাকালীন আরেকটি ট্রেন চালুর দাবি করে আসছিলেন জেলাবাসী। দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়দের নিরাপদ ভ্রমণ ও যাত্রা সহজ করতে এই রুটে দিবাকালীন একটি ট্রেন চালুর ঘোষণা দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে ট্রেনের নামকরণ নিয়ে শুরু হয় নাটক।

গত ২৯ মে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের পক্ষে মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে নতুন এই ট্রেনের নাম ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ৩০ মে ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ নাম চূড়ান্ত করে সিডিউল ঘোষণা করেন রেলওয়ে মহাপরিচালক কামরুল আহসান। একইদিন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক আদেশে ট্রেনটি উদ্বোধনের বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে বারবার নাম পরিবর্তনের কারণে ক্ষুব্ধ নীলফামারীর মানুষ। তাদের দাবি ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ নয়, এই ট্রেন প্রস্তাবিত নাম অনুযায়ী জেলার নামে ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ হোক। এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দেন এলাকার মানুষ। দাবি আদায়ে ট্রেন, সড়ক অবরোধ ছাড়াও মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন তারা।

নীলফামারী পৌর শহরের গাছবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মানিক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রেনটি প্রথমে নীলফামারীর নামে নামকরণ হয়েছিল। সেই নাম যেন বহাল থাকে। নীলফামারীবাসীর পক্ষ থেকে এই অনুরোধ করছি। আশা করি প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ রাখবেন। নীলফামারীবাসীর আবেগ অনুভূতির নামটি যেন বহাল থাকে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেইফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাসেল আমিন স্বপন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নীলফামারীবাসীর দাবির পরিপেক্ষিতে নতুন ট্রেন দিয়েছেন। তিনি নীলফামারীবাসীর ওপর খুশি হয়ে এই ট্রেনটি দিয়েছেন। আমরা চাই নতুন ট্রেনটির নামকরণ করা হোক ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’। আমাদের নীলফামারীবাসীর জোর দাবি নীলফামারী স্টেশনে কিশোরগঞ্জ, জলঢাকাসহ চার উপজেলার মানুষ টিকিট সংগ্রহ করে। এখানে টিকিটের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানলে অবশ্যই সমাধান দিবেন।

সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চারদিন ধরে নীলফামারী এক্সপ্রেস নামটি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। নীলফামারীবাসীর প্রাণের দাবি নীলফামারী এক্সপ্রেস চাই। এই ট্রেনটির বার বার নাম পরিবর্তন করে আমাদের সাথে তামাশা করা হয়েছে। প্রথমে চিলাহাটি এক্সপ্রেস দিলে আমরা মেনে নিতাম। কিন্তু আশার আলো দেখিয়ে নিভিয়ে দিলে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, নতুন ট্রেনটি সপ্তাহের শনিবার ছাড়া বাকি ছয় দিন নিয়মিত চলাচল করবে। ট্রেনটি চিলাহাটি থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে ঢাকায় পৌঁছাবে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে। ঢাকা থেকে বিকেল সোয়া ৪টায় ছেড়ে চিলাহাটি পৌঁছাবে রাত পৌনে ২টায়। চীন থেকে আমদানি করা নতুন কোচের ওই ট্রেনে আসনসংখ্যা ৭৯২টি। ট্রেনটিতে এসি সিট, এসি চেয়ার ও শোভন চেয়ার শ্রেণির আসন ব্যবস্থা থাকবে। চিলাহাটির পর বিরতি রয়েছে ডোমার, নীলফামারী, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, সান্তাহার, ঈশ্বরদী বাইপাস ও বিমানবন্দর স্টেশনে।

এর আগে, সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে আন্তঃনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস চলাচল শুরু করে ২০০৭ সালে। এরপর রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েল গেজ করার পরে ওই ট্রেনটির গন্তব্য নীলফামারী থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত করা হয়। নীলসাগর চালু হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গের একাধিক রুটে একাধিক ট্রেন চালু করা হলেও ঢাকা-চিলাহাটি রুটে একটি মাত্র নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করছে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা বলেন, আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছি। চীন থেকে আনা নতুন কোচ দিয়ে ট্রেনটি সাজানো হয়েছে। ফলে যাত্রীরা আনন্দে আরামদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। ট্রেনটি সপ্তাহের শনিবার চলাচল বন্ধ থাকবে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান বলেন, ট্রেনের র‌্যাকটি আমাদের কারখানায় কমিশনিং হয়েছে। লোড ট্রায়ালও করেছি আমরা। গত সপ্তাহে রেলের ট্রাফিক বিভাগের কাছে ট্রেনটি হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রেলওয়ে। ইতোমধ্যে ট্রেনটির ট্রায়াল শেষ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর চিলাহাটি থেকে ঢাকার পথে ছাড়বে ট্রেনটি।

শরিফুল ইসলাম/ওএফ