ঠাকুরগাঁওয়ের বিশালাকৃতির সেই আম গাছে এবার প্রায় ৫০ মণ সূর্যপুরী আম ধরেছে। গত বছর এই গাছ থেকে ৪০ মণ আম পেয়েছিলেন গাছটির মালিক। এবার আরও ১০ মণ আম বেশি পাবেন বলে তিনি ধারণা করছেন।

প্রায় দুই বিঘা জমি নিয়ে অবস্থিত বিশাল এই আম গাছটির অবস্থান জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামে। গাছটি শুধু জেলায় নয় পুরো দেশে এক বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছটি এক জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে দেখা অসম্ভব। গাছের মূল থেকে ডালপালাকে আলাদা করে দেখতে চাইলে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। বিশালাকৃতির এই গাছটিকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আর এই গাছটি দেখতে প্রতিনিয়তই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা ভিড় করেন।

জানা যায়, গাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ ফুট, এর পরিধি প্রায় ৩৫ ফুট। মূল গাছের তিন দিকে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে ১৯টি মোটা ডালপালা। বয়সের ভারে গাছের ডাল নুয়ে পড়লেও গাছটির শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। এখন আমের সময় সবুজ আমে টইটম্বুর এই গাছটি। আমগুলোর ওজনও হয় প্রতিটি ২৫০ গ্রাম থেকে ২৭০ গ্রাম। এবারও গাছটিতে ব্যাপক পরিমাণে আম ধরেছে। প্রকৃতির আপন খেয়ালে ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঠাকুরগাঁয়ের এই আমগাছটি। গাছটির বয়স কত তা ঠিক করে বলতে পাড়ছেন না কেউ। তবে এলাকার বেশির ভাগ মানুষ একমত যে গাছটির প্রায় ২০০ বছরের কম নয়।

রংপুর থেকে বালিয়াডাঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী আমগাছটি দেখতে আসা জেনিসন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক দিন ধরেই দেখছি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গীতে অবস্থিত। তাই আজ স্বচোখে দেখার জন্যই এখানে আসা। আমার জানামতে শুধু এশিয়া মহাদেশের মধ্যে নয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আম গাছ এটি। সত্যিই আমগাছটি নিজ চোখে না দেখলে এর বিশালতা বোঝার উপায় নেই।

স্থানীয় মানিকুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামে আমার বাসা। আমি প্রতিদিনই দেখি এখানে ৫০০ থেকে ৬০০ পর্যটক এই সূর্যপুরী আম গাছটি দেখতে আসে। বিভিন্ন জেলার মানুষ আসে এই আমগাছটি দেখতে এবং কি দেশের বাইরে থেকেও আসে।

উত্তরাধিকার সূত্রে বালিয়াডাঙ্গী সূর্যপূরী আমগাছটির বর্তমান মালিক নূর ইসলাম। নুর ইসলামের বাবার দাদা গাছটি লাগিয়েছিলেন। নুর ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, প্রতি বছর গাছটিতে প্রচুর আম হয়। ৮২ শতক জমিজুড়ে এটি বিস্তৃত। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক এসে ভিড় করে। গত বছর প্রায় ৪০ মণেরও বেশি আম বিক্রি করা হয়েছিল। এবারও প্রচুর আম ধরেছে, আশা করি এবার ৪০ থেকে ৫০ মণের বেশি আম হবে।

 স্থানীয় নজরুল ইসলাম বলেন, এবার এই সূর্যপুরী আম গাছটির আম আমি ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছি। আমি তখন থেকে দেখছি বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এই আম গাছটি দেখতে আসে। এছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচুর পরিমাণে সূর্যপুরী আম বাগান রয়েছে। এমন সুস্বাদু আম দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকায় অল্প মূল্যে কিনতে পারে ক্রেতারা। আর আম প্রিয় মানুষের কাছে এই আমের কদরও অনেক বেশি।

ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহাবুব আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই গাছটি শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের গর্ব না এই গাছটি সারাদেশের গর্ব। পর্যটকদের জন্য আমরা বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছি। গিনেস বুকে ইতোমধ্যে আমরা আবেদন করেছি। গিনেস বুকে নাম লেখানো যায় কিনা সেজন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

আরকে