দিনে ফুচকা বিক্রেতা, রাতে চিত্রশিল্পী
চটপটির বাটি ও চামচের টুংটাং শব্দে কথা বলার ফুসরত নেই তার। নাম তার আব্দুল আজিজ। দীর্ঘদিন ধরে ফুচকা বিক্রি করায় ঠাকুরগাঁও শহরের সবার কাছে পরিচিতি তিনি।
গত ৩৯ বছর ধরে শহরের বড় মাঠের এক কোণে ফুচকা বিক্রি করে আসছেন তিনি। তার দোকানের নাম ছবি চটপটি ঘর। তবে এছাড়া তার একটি নেশা রয়েছে। প্রথম দেখায় কেউ বিশ্বাস না করলেও খুব সুন্দর ছবি আঁকেন তিনি। সেটিকেও বেছে নিয়েছেন নিত্য দিনের সঙ্গী হিসেবে। ছবি আঁকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই আজিজের। জানা নেই চিত্রাঙ্কনের ব্যাকরণ। তারপরও তাঁর আঁকা ১১টি চিত্রকর্ম ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিলো জেলা শহরের পাঠাগার মিলনায়তনে ছবি প্রদর্শনীতে।
বিজ্ঞাপন
এরপর একুশের বইমেলায়। সেই মেলাচত্বরে আজিজের আঁকা ছবিগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এতে ব্যাপক সাড়া মেলে। এখন পর্যন্ত তিনি শতাধিক ছবি এঁকেছেন শুধুমাত্র পেন্সিলের মাধ্যমে।
চিত্রশিল্পী আব্দুল আজিজ বলেন, যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকে প্রবল ইচ্ছে জাগতো ছবি আঁকার। পাঠ্য বইয়ের ছবি দেখে ছবি আঁকার উৎস। এরপর মাটিতে হাত দিয়েই ছবি আঁকতাম, টুকরো কাগজ পেলে ছবি আঁকতাম। একটা সময় হাইস্কুলের সহপাঠীদের ছবি আঁকা শেখার জন্য অনুরোধ করলে তারা শেখায়নি। উল্টো তারা অনেকেই আমাকে বলত তুই তো পড়ালেখা জানিস না তুই আর কী আঁকবি।
আজিজের আঁকা ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,সবুজ প্রকৃতি,পাহাড়ি জুমচাষ, মাছ ধরা শেষে জেলেদের বাড়ি ফেরা, তাঁত বোনার চিত্র,নদীনালা,চা বাগানে পাতা সংগ্রহের দৃশ্য ইত্যাদি।
কীভাবে ছবি আঁকা শিখলেন এমন প্রশ্নে আজিজ বলেন,ছবি আঁকার ব্যাকরণ আমার জানা নেই। কাগজ আর পেনসিল দিয়ে নিজের মতো করেচর্চা করছি।
তার স্ত্রী বিলকিস বেগম বলেন,৩৩বছরের সংসার জীবনে তাকে দেখি রাত জেগে শুধু ছবি আঁকতে। তাঁর শিল্পচর্চা দেখে একটি সময় অভিমান করলেও এখন আমার তার চিত্রকর্ম ভালো লাগে। তাই তাকে এ কাজে উৎসাহ দেই।
৬৫ বছর বয়সী আজিজ বলেন, ইচ্ছে ছিলে ঢাকার যে কোন একটি আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু পারিনি,এখন আর যোগ্যতার বাইরে স্বপ্নও দেখিনা। এমনকি চারুকলায় পড়তে না পারলেও কোনো আক্ষেপ নেই। তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা একটাই ছবি এঁকে যাওয়া। আর সে ছবি গুলো ঢাকায় একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারলেই তার সব ইচ্ছে ও স্বপ্ন পূরণ হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের সংস্কৃতি ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনোতোষ কুমার দে বলেন, ছবির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রকৃতি। তার প্রতিটি ছবিতেই একধরনের সরলতা আছে। ছবিগুলো মাটির কথা বলে, জীবনের কথা বলে। এক কথায় কোনো রং ব্যবহার না করে শুধু পেনসিল আর সাদা কাগজেই তিনি যেভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন গ্রামীণ আবহ,তা সত্যি প্রশংসনীয়।
পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম বন্যা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া শত বাধা ডিঙিয়ে নিজ শিল্পীসত্ত্বাকে লালন করছেন আজিজ। তার মঙ্গল কামনা করি। আজিজের মত আমাদের চারপাশে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে। তাদেরও খুঁজে বের করে সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করা প্রয়োজন।
আরকে