সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের জনসাধারণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২টি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যবহার না করায় ও অযত্ন- অবহেলায় উপহার পাওয়া অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে দুটিই এখন নষ্ট হওয়ার পথে। সেবা না দিয়েই ঘাটে পুরোপুরি অকেজো হয়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স দুটি।

ময়লা ও আবর্জনায় ভাঙাচোরা অবস্থায় বেহাল পড়ে আছে উপজেলার মেঘাই নৌ-ঘাটে। চরাঞ্চলের তেমন কেউই জানে না এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স সেবার কথা। স্থানীয়দের দাবি এসব নৌ-আ্যাম্বুুলেন্স কখনও জনসাধারণের সেবায় আসেনি। তেল বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সের এমন বেহাল পরিস্থিতি বলছেন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি যমুনা নদীর চরাঞ্চলে অবস্থিত। লোক সংখ্যা বিবেচনায় উপজেলার অর্ধেক মানুষ যমুনার চরে বসবাস করে। চরাঞ্চলে দুটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও প্রতি ইউনিয়নে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও অপ্রতুল লোকবল এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় জেলা সদরসহ বিভিন্নস্থানে স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীরা যাতায়াত করে থাকেন।

প্রথম অ্যাম্বুলেন্স ঠিক কবে কাজিপুরের আনা হয়েছিল তার কোনো তথ্য না থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয়টি প্রায় ৭ বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে পাওয়া। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আউটসোর্সিং থেকে একজন চালকও রয়েছেন, যার কাজ না থাকলেও সব সুবিধা তিনি পেয়ে থাকেন।

কাজীপুর সদর ইউনিয়নের খুদবান্ধি গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, দুর্গম চরাঞ্চলের বসবাসরত মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী দুইটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দিয়েছিলেন শুনলাম। সেটি আমাদের জানা নেই। তবে দিলেও সেটি জরুরি স্বাস্থ্যসেবার কাজে কখনও ব্যবহার করতে দেখিনি।

উপজেলার রেহাইশুড়িবেড় গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, চরাঞ্চলের বসবাসরত মানুষের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনে ভাড়া নৌকা একমাত্র ভরসা। তাই শিশু, বয়স্ক ও প্রসূতিদের ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকারি এমন সুবিধা থাকলেও আমরা কেউ জানি না। জরুরি প্রয়োজন হলে ভাড়া নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা সদরে যেতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। দ্রুতগতি সম্পন্ন আধুনিক নৌ-অ্যাম্বুলেন্স এ অঞ্চলের জন্য খুবই প্রয়োজন।

নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল কবির বলেন, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে নৌকায় পারাপারে সময় সুস্থ মানুষ অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একটা ভালো মানের নৌ-অ্যাম্বুলেন্স থাকলে সঠিক সময়ে উন্নত স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় হতো।

কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোমেনা পারভিন পারুল বলেন, প্রথম নৌ-অ্যাম্বুুলেন্সটি অকেজো হয়ে পড়েছে। তবে দ্বিতীয় অ্যাম্বুলন্সেটি সচল আছে। গত ৭-৮ মাস আগে সংস্কার করা হয়েছে। সরবরাহকৃত নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি ধীরগতি সম্পন্ন হওয়ায় জনপ্রিয়তা পায়নি। এছাড়াও নৌ-অ্যাম্বলেন্সের জন্য তেল অথবা সমপরিমাণ অর্থ সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে পাড়ছে না। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায়ের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

শুভ কুমার ঘোষ/আরকে