সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৯ জনের মৃত্যুতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়িতে বাড়িতে প্রস্তুত করা হচ্ছে খাটিয়া। মরদেহ দাফনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। স্বজনহারাদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ভাটিপাড়া গ্রামের চারপাশ। নিহতদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ভাটিপাড়া গ্রামে কান্নার রোল পড়ে গেছে। 

জানা গেছে, বুধবার (৭ জুন) ভোরে সিলেটে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে সুনামগঞ্জের অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ৯ জনের বাড়ি দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নে। 

নিহতরা হলেন- দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে মো. সৈয়ব আলী (২৭),  বাদশা মিয়া (২৫), মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), হারুন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬),  সুনাই মিয়ার ছেলে সাধু মিয়া (৪০), মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নুর (৬০), আলীনগর গ্রামের শিশু মিয়ার ছেলে হারিছ মিয়া (৫৫), পাতাইয়া কাইম গ্রামের জসিম মিয়ার ছেলে একলিম মিয়া (৫০) ও গছিয়া গ্রামের বারিক উল্লাহর ছেলে সিজিল মিয়া (৫৫)। 

এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে পাগল প্রায় নিহতদের স্বজনরা। কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ ভাই, কেউবা হারিয়েছেন স্বামী। গ্রামবাসীর ঘুম ভেঙেছে স্বজন হারানোর খবরে। 

নিহত বাদশা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে উঠানে খাটিয়া রাখা হয়েছে। তার মা সেজুফা বেগম তার ছোট ছেলে মুত্তাকিনকে জড়িয়ে ধরে অনবরত কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, গরমে আমার ছেলে কদিন কাজে যায়নি। আজ ভোরে কাজে যাওয়ার পথে আমার ছেলে শেষ হয়ে গেছে। আমার বাদশা আর নাই। আমার সব শেষ হয়ে গেল। 

একই অবস্থা নিহত রাশিদ মিয়ার স্ত্রী রাসিবা বেগমের। তিনি বলেন, শেষ রাতে ফোন দিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। আমার সঙ্গে কথা শেষে ছেলের সঙ্গেও কথা বলেন। ছেলেকে সিলেট নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কথা হয়। সকালে উঠে শুনি একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। পরে শুনি আমারই সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমার স্বামী। তাকে ছাড়া আমি বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কেমনে জীবন কাটাবো। আল্লাহ আমার সঙ্গে এ কি করলেন!

মৃত্যুর খবরে নিহত প্রতিটি বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। শোকে স্তব্ধ গ্রামবাসী। মরদেহ গ্রামে আসার অপেক্ষায় তারা। ইতিমধ্যে ছাচ, বাঁশ, খাটিয়া নিয়ে মৃতদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।  

ভাটিপাড়া গ্রামের সায়েদুল হক বলেন, একসঙ্গে এতো মানুষের মৃত্যুর খবরে গ্রামের সবাই বাকরুদ্ধ। এতো লাশ একসঙ্গে দেখা লাগবে এটা ভাবাও যায় না। যে কয়জন মারা গেছে তারা সবাই শ্রমিক। তারা পেটের টানে ঘরবাড়ি ছেড়ে সিলেট গিয়েছিলেন। 

জুনাব আলী বলেন, এরা সবাই খুবই গরিব। একশো টাকা ভাড়া দিয়ে যে একটা বাঁশ কিনবে সেই ক্ষমতাও নেই। এতগুলো পরিবারের কী হবে, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। 

ইকামত মিয়া বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুনি আমাদের গ্রামের এতগুলো মানুষ মারা গেছে দুর্ঘটনায়। গ্রামের যে দিকেই যাই বাড়ির সামনে খাটিয়া পড়ে আছে। গ্রামের সবাই মিলে এখন দাফন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। লাশ আসতে আসতে হয়তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে তাই আগেই কাজ সেরে রাখছে। 

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের নির্দিষ্ট কোনো তালিকা আমাদের কাছে আসেনি। তবে খবর পাচ্ছি সুনামগঞ্জের ১০-১২ জন মারা গেছেন। উপজেলা প্রশাসনকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সোহানুর রহমান সোহান/আরএআর