পটুয়াখালীতে অসহায় নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। ফান্ডিং ফর বাংলাদেশ ও ভলান্টিয়ার্স অপরচুনিটির সহযোগিতায় এসব সেলাই মেশিন বিতরণ করে ‘পটুয়াখালীবাসী’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেল ৪টার দিকে জেলার ঝাউবনের কাশ্মীর রোডে ১৫ জন অসহায় নারীকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়।

সেলাই মেশিনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মহীন নারীদের স্বাবলম্বী করতে এই উদ্যোগ বলে জানায় সংগঠনটি। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

সেলাই মেশিন পাওয়া শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী একজন রিকশাচালক। আমার একটি সেলাই মেশিনের খুব দরকার ছিল। টাকার অভাবে সেলাই মেশিন কিনতে পারি নাই। একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিনের উপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছি কিন্তু সেলাই মেশিন না থাকায় টাকা উপার্জন করতে পারি না। তারা আমাকে একটি নতুন সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছে এবং আমি এই সেলাই মেশিন দিয়ে টাকা উপার্জন করে নিজের সংসারে কিছুটা হলেও অবদান রাখার সুযোগ পাব।

রাশিদা বেগম বলেন, সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি অনেক আগেই কিন্তু টাকার অভাবে একটি মেশিন কিনতে পারি নাই। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাকে সেলাই মেশিনটি দেওয়া হয়েছে। আমি তাদের ওয়াদা করেছি সেলাই মেশিনটি দিয়ে টাকা উপার্জন করে অন্য আরেকজন কর্মহীন নারীকে উপহার দিয়ে দেব। একটি সেলাই মেশিন থাকলে মাসে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা আয় করা যায়।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পটুয়াখালীবাসী’র সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমরা বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে প্রান্তিক মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ভলান্টিয়ার অপরচুনিটি ও ফান্ডিং ফর বাংলাদেশ আমাদের ১ লাখ টাকা দিয়েছে এই সেলাই মেশিন প্রজেক্ট এর জন্য। তাদের অর্থ দিয়েই এই সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। আমাদের এই সেলাই মেশিন বিতরণের একটাই শর্ত, যাদের সেলাই মেশিন দেওয়া হয় তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পরে অন্য আরেকজন নারীকে এই সেলাই মেশিন কিনে দেওয়ার জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে। আর এভাবেই প্রতিবছর একজন নারী স্বাবলম্বী হলে তার হাত ধরে আরও একজন নারী এগিয়ে যাবে। এভাবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শতাধিক নারীকে স্বাবলম্বী করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সমাজের অসহায় নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতেই সেলাই মেশিন বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পটুয়াখালীবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিত্তবানদের সহযোগিতায় এলাকার গরীব দুস্থদের পাশে থাকে। ভলান্টিয়ার অপরচুনিটি ও ফান্ডিং ফর বাংলাদেশ এই দুটি সংস্থা আমার এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে এজন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই মানবিক কাজে পাশে থাকা সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো একজনের আয়ের উপর নির্ভর না করে ঘরে বসে অল্প কিছু হলেও উপার্জন করতে পারলে সংসারটি ভালোভাবে পরিচালনা করা যায়।

উল্লেখ্য, অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে ২০১০ সাল থেকে সেলাই মেশিন প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পটুয়াখালীবাস’। এই কর্মসূচির আওতায় গত বছর ৯টি এবং চলতি বছর ১৫টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। তবে, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী যাদের সেলাই মেশিন দেওয়া হয় তারা সেই সেলাই মেশিন দিয়ে অর্থ উপার্জন করে দুই বছর পর অন্য আরেক কর্মহীন নারীকে সেলাই মেশিনটি উপহার হিসেবে প্রদান করবেন।

মাহমুদ হাসান রায়হান/এবিএস