দীর্ঘদিন ধরে চালু নেই রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জেনারেটর। গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং এর তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। দিনে লোডশেডিং হলে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের কিছুটা কষ্ট হলেও রাতে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এমনকি রাতে লোডশেডিং হলে হাসপাতালে সৃষ্টি হয় ভুতুরে পরিবেশের।

বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালটিতে লাইট জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে রোগীর স্বজনদের মোবাইলের আলোতে চলাফেরা করতে হয় হাসপাতালে। বর্তমানে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। শ্বাসকষ্ট আর হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তির যেন সীমা নেই। প্রচন্ড গরমে আরও বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছেন তারা। এছাড়া রয়েছে মশার উপদ্রব।

সরেজমিনে সন্ধ্যার পর রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঘণ্টাখানেক হলো বিদ্যুৎ নেই। পুরো হাসপাতাল অন্ধকারাচ্ছন্ন। একরকম শুনশান পরিবেশ। হাসপাতালের আউটডোর ও জরুরি বিভাগে আইপিএসের ব্যবস্থা থাকায় সেখানে আলো জ্বলছে। জরুরি বিভাগের সামনে থেকে কয়েক হাত দূরে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। রোগীর স্বজনরা মোবাইলের লাইট ধরে হাঁটাহাঁটি করছে। জরুরি বিভাগ থেকে সামনে এগিয়ে নিচ তলার মেডিসিন ও সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অন্ধকারে রোগী ও স্বজনরা বসে রয়েছেন। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের কেউ মোবাইলের আলো অথবা চার্জার লাইট জালিয়ে রেখেছেন। ফ্যান না চলায় তীব্র গরমে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন। রোগীর স্বজনরা আবার হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। একই চিত্র দেখা যায় হাসপাতালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়। পুরো হাসপাতালে যেন এক ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, শুধু জেলার সদর হাসপাতাল নয়, জেলার কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থায়ও একই। এর মধ্যে কালুখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা আরও করুণ। হাসপাতালটির অনেক ফ্যানই নষ্ট। ফলে ভর্তি রোগীদের বাড়ি থেকে ফ্যান নিয়ে আসতে হয়। তবে হাসপাতালে কোনো জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই।

এছাড়া জেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ এই তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেনারেটর রয়েছে। তবে এসব জেনারেটর চালানোর জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকায় দিনে বিশেষ প্রয়োজনে চালানো হলেও রাতের লোডশেডিংয়ে বন্ধ থাকে জেনারেটর।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা আকমল শেখ বলেন, আমি দুইদিন ধরে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছি। এখানে জেনারেটর এর কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনের বেলা বিদ্যুৎ চলে গেলে ফ্যান চলে না, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দিনের বেলা যেমন তেমন কিন্তু রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে বেশি কষ্ট হয়। ফ্যান চলে না, অন্ধকার থাকে। মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। রোগী ও রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের বেশি কষ্ট হয়।

হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে আসা ইয়াসমিন নামের একজন বলেন, রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়। মোবাইলের লাইট জালিয়ে রাখতে হয়। ফ্যান চলে না, হাতপাখা দিয়ে বাতাস নিতে হয়। জেলার একটি হাসপাতালের এমন খারাপ অবস্থা মানা যায় না।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.এস এম এ হান্নান বলেন, হাসপাতালে ডাবল ফেজের লাইন চলে। এক ফেজ গেলে আরেক ফেজ সচল থাকে। এছাড়া হাসপাতালের আউটডোর ও জরুরি বিভাগে আইপিএসের সুবিধা রয়েছে। যে কারণে জেনারেটরের ব্যবস্থা নেই।

তবে সিভিল সার্জন ডা. মো.ইব্রাহীম টিটন এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোতে লোডশেডিং যেন কম দেওয়া হয় সেজন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। আর আমাদের যে সকল হাসপাতালে জেনারেটর আছে এবং তেলের বরাদ্দ আছে সেসব হাসপাতালে প্রয়োজন হলে জেনারেটর চলবে। আর যে হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর নেই বা নষ্ট, সেগুলো আমরা ঠিক করার ব্যবস্থা করছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে জানাচ্ছি।

মীর সামসুজ্জামান/এবিএস