সাড়ে আট একর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মরহুম ইয়ার উদ্দীন খলিফা (র.)-এর মাজার। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুকরণে অনন্য এই পুণ্যভূমি অনেক বিষয়েকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।

এ দরবারে রয়েছে মসজিদ, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংসহ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের চার শতাধিক শিক্ষার্থী তিন বেলা খাবার পায় মাজারের অর্থে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং মাজার কমিটির ৭২ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন ভাতাও দেওয়া হয় মাজারের আয়ের অর্থ থেকে।

প্রতি মাসে ১৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয় এসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য। আর মাজারের এই অর্থের জোগান আসে সাধারণ মানুষের দান এবং মানতের মাধ্যমে। শুধু মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা নয়, এ মাজারে দান এবং মানত করেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও। প্রতিদিন দুই শতাধিক দরিদ্র মানুষকে খাবার খাওয়ানো হয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইয়ার উদ্দীন খলিফা (র.) মৃত্যুবরণ করার পর তার কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ মাজার পরিচালনা করেন তার সহচর আলী মল্লিকের স্বজনরা। কিন্তু এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হলে ১৯৯৬ সালে মাজার পরিদর্শনে যান বরিশালের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ সেরনিয়াবাত আবুল হাসনাত মো. আব্দুল্লাহ। পরে জটিলতা নিরসনে তিনি এ মাজারের সব সম্পদ ও সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন।

এরপর থেকেই ওয়াকফ সম্পত্তি আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় এই মাজার। প্রতিবারই পদাধিকারবলে মাজার কমিটির সভাপতি হন মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

মির্জাগঞ্জ দরবার শরিফে একটি আলিম মাদরাসা, একটি হাফেজিয়া মাদরাসা, একটি নুরানি মাদরাসা, একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া মসজিদ, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং এতিমখানা তো রয়েছেই।

এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ দরবার-সংশ্লিষ্ট এতিমখানার আবাসিক শিক্ষক মো. মাসুদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এতিমখানায় বর্তমানে ৫৬ জন এতিম শিক্ষার্থী আছে। তাদের তিন বেলা খাবারের জোগান দেয় মাজার কমিটি। এ ছাড়া এখানে আমিসহ দুজন শিক্ষক আছেন। যাদের বেতন-ভাতাও দেওয়া হয় মাজারের অর্থ থেকে।

এ বিষয়ে নুরানি মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ মাদরাসায় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে. যারা সবাই আবাসিকে থাকছে। তাদের তিন বেলা খাবার আসে মাজারের অর্থ থেকে। এ ছাড়া ওই মাদরাসার পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। যাদের বেতন-ভাতাও দেওয়া হয় মাজারের অর্থ থেকে।

এ বিষয়ে মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদ মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই মাজারে অর্থ আসে মানুষের দান ও মানতের মাধ্যমে। প্রতি মাসে আমাদের ১৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয় মাজার-সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। মাজারে মুসলমানদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও মানত করেন। এই মাজারে মুসলিম ধর্মের রীতিনীতি মেনেই সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই কখনো এই মাজার কোনো রকম অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয় না।

তিনি বলেন, মাজারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। সেই অ্যাকাউন্টে মানুষ তাদের দান ও মানতের টাকা জমা করে দেন। এ ছাড়া সরাসরি মাজারে এসে নির্দিষ্ট দানবাক্সে দান এবং মানতের টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অন্যদিকে দেশব্যাপী আমাদের মাজারের দান বাক্স আছে। সেসব দান বাক্সেও অসংখ্য মানুষ এই মাজারের জন্য দান করেন।

মাজার কমিটির সহসভাপতি মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিবুল্লাহ বলেন, মাজারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। মাজার কমিটি ছাড়াও এখানে একটি ভাউচার কমিটি রয়েছে। মাজারের অর্থে কেনা সব পণ্যের রশিদ যাচাই করেন কমিটির সদস্যরা। তাই এখানে অর্থনৈতিক অস্বচ্ছতার কোনো সুযোগ নেই।

ওসি বলেন, এই মাজারে ব্যয়ের পর উদ্বৃত্ত যে অর্থ থাকে, তা মাজারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। এ ছাড়া বার্ষিক মাহফিলে অসংখ্য মানুষ আসে। তারা মহিষ, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল-ডাল নিয়ে আসেন সঙ্গে করে, যা রান্না করে সবাইকে খাওয়ানো হয়। এরপর যা উদ্বৃত্ত থাকে, তা বিক্রি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়।

এনএ