নরসিংদীর মনোহরদীর পৌর এলাকায় ৬ দিন ধরে এক অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও তার ৪ মেয়ে খাটের নিচে তার মৃত স্ত্রীর শামীমা সুলতানা নাজমার (৫৫) মরদেহ রেখে খুব স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করছিলেন। পচা মরদেহের দুর্গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেয়। 

শনিবার (১০ জুন) রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরে গতকাল রোববার (১২ জুন) সন্ধ্যায় নিহতের মরদেহ দাফন শেষে স্বামী মোক্তার উদ্দিন তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায় মনোহরদী থানা পুলিশ। 

স্ত্রী পুনরায় জীবিত হওয়ার আশায় তার মরদেহ রেখে দিয়েছিলেন বলে জানান অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দিন তালুকদার (৬৮) ও তার ৪ মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দিন তালুকদার (৬৮), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৫৫) ও তাদের চার মেয়ে মাহবুবা তালুকদার (৩৬), রোকসানা তালুকদার (৩৪), আফরোজা তালুকদার (২৮) ও নিষাদ তালুকদার (২৫)। তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে বের হতেন না। নিজেরাই বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা জিজ্ঞাসা করেও কোনো সুদত্তর পায়নি। তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন। নিহত শামীমা সুলতানা নাজমা তার পরিবারের সদ্যদের বলে গিয়েছিলেন, তিনি যদি কোনো সময় মারা যান তাহলে তার মরদেহ রেখে যেন পরিবারের সবাই অপেক্ষা করে। তিনি ৩ থেকে ৪ দিন পর পুনরায় জীবিত হবেন। গত সোমবার শামীমা সুলতানা নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদ্যরা বিষয়টি কাউকে জানায়নি। তারা সবাই মৃত নাজমার জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে অপেক্ষা করতে থাকে। এদিকে প্রতিবেশীরা পচা গন্ধ পেলে প্রথমে  ইদুঁর মারা গেছে ধারণা করে। পরে ধীরে ধীরে গন্ধ তীব্র হওয়ায় পাশাপাশি তাদের রহস্যজনক আচরণের কারণে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে রহস্য উদঘাটন করে। এসময় পুলিশ খাটের নিচ থেকে নাজমার মরদেহ উদ্ধার করে। আর পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মৃত নাজমার স্বামী ও চার মেয়ে

মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, থানা থেকে তাদের রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের শারীরিকভাবে অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। 

মনোহরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন বলেন, পরিবারটি এক পীরের মুরিদ ছিলেন। তারা জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। পুনরায় জীবিত হওয়ার আশায় তারা মরদেহ খাটের নিচে রেখে দিয়েছিল। আমরা নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। গতকাল সন্ধ্যায় ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে ওই নারীর দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে মরদেহের প্রতি অবমাননার দায়ে মৃতের স্বামী মোক্তার হোসেন তালুকদারকে গ্রেপ্তারের পর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আর পরিবারের বাকি সদস্যদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আর এটি স্বাভাবিক মৃত্যু কিনা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

তন্ময় সাহা/আরকে