শরীয়তপুরে মিঠু মৃধা (৩৫) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে অসুস্থ অবস্থায় স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিন বছরের মেয়ে মুনতাহাকে নিয়ে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ নিতে এসেছেন তার স্ত্রী মুক্তা খানম।

স্বামীর মরদেহের পাশে অঝোরে কাঁদছেন স্ত্রী মুক্তা খানম। মায়ের কোলে বসে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে মুনতাহা। সে জানেই না তার বাবা মিঠু মৃধা আর বেঁচে নেই।

সোমবার (১২ জুন) সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক জাজিরা উপজেলার ডুবিসায়বর কাজিরহাট শাখার জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ) মিঠু মৃধাকে শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্নসহ কাজীরহাটের তার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মিঠু মৃধা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর শরিকল এলাকার আব্দুল মান্নান মৃধার একমাত্র ছেলে। তিনি তার স্ত্রী মুক্তা খানম ও একমাত্র সন্তান মুনতাহাকে নিয়ে কাজীরহাটের বাবুল মৃধার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

ন্যাশনাল ব্যাংক ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মিঠু মৃধা ১০ দিনের ছুটি শেষে গতকাল ব্যাংকে ডিউটি করেছেন। এরপর কাজীরহাটের ভাড়া বাসায় মিঠু মৃধা গতকাল রাতে একাই ছিলেন। তার স্ত্রী ও মেয়ে তার শ্বশুরবাড়ি মাদারীপুরের কালকিনিতে ছিলেন। ২-৩ দিনের মধ্যে তাদের শরীয়তপুরে আসার কথা ছিল। কিন্তু আজ মিঠু মৃধা শরীরে রহস্যজনক আঘাত নিয়ে মারা গেলেন।

মিঠু মৃধার বাড়ির মালিক বাবুল মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে বাড়িতে ঘটনা ঘটেছে আমি তার পাশের বাড়িতে থাকি। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আমার আরেক ভাড়াটিয়া আমাকে খবর দেন মিঠু মৃধা অসুস্থ। খবর পেয়ে আমি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মিঠু মৃধা শুয়ে আছেন। তার মাথা ও হাতে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তখন ওইখানে উপস্থিত লোকজন বলল গেট খুলতে গিয়ে হয়ত জখম হয়েছেন। আরেক ভাড়াটিয়া আজগর হক আমাকে জানান অসুস্থ অবস্থায় মিঠু মৃধা গেট খুলতে গেলে তিনি (আজগর হক) গেট খুলে দেন। আমাদের সঙ্গে তিনি অস্পষ্টভাবে কথা বলছিলেন। অস্পষ্ট কথার কারণে আমাদের ধারণা তিনি স্ট্রোক করেছেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। মিঠু মৃধা আমার বাড়িতে এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়া থাকেন। আমার জানা মতে তার সঙ্গে কারও কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না।

ন্যাশনাল ব্যাংক কাজীরহাট শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার ফরিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল পৌনে ৮টার দিকে খবর পেয়ে আমি মিঠুর বাসায় যাই। সেখানে তার সঙ্গে কথা বলি। তার মাথা ও হাতে কীসের আঘাত জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এরপর আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। মিঠুর সঙ্গে অফিসের কারও কোনো সমস্যা ছিল না। সহকর্মীকে হারিয়ে আমরা মর্মাহত।

মিঠু মৃধার ভগ্নিপতি আলমাস হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার (মিঠু মৃধা) মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা মরদেহ নিতে এসেছি। আমরা ব্যাংকের অফিসারদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, যখন তাকে উদ্ধার করা হয় তখন তার মাথা, হাত ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

মিঠু মৃধার স্ত্রী মুক্তা খানম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি নিজের ক্ষতি করে হলেও অন্যের উপকার করতেন। আমার মেয়েটা এতিম হয়ে গেল। মুনতাহা বুঝল না বাবা কী! মুনতাহা জানে না ওর বাবার কী হয়েছে।

মিঠু মৃধার বাবা আব্দুল মান্নান মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার একমাত্র ছেলে হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছে। হত্যার বিচার যে কেনো মানুষের চাওয়া নাগরিক দায়িত্ব। আমি অবশ্যই মামলা করব। বিচার দাবি করব।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিঠু মৃধাকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। তার মাথা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা পুলিশের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছি।

জাজিরা থানা পুলিশের এসআই জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সুরতহালের সময় তার (মিঠু মৃধা) মাথা ও হাতে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। জখমে যেহেতু কোনো রক্ত ছিল না সেহেতু ধারণা করছি তিনি স্ট্রোক করেছেন। আমরা মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি। মেডিকেল রিপোর্ট এলে বলতে পারব কী ঘটেছিল তার সঙ্গে। যদি তার পরিবার এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/এমজেইউ