চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ-গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের শ্রমিকদের (ওয়েটার) বেতনের টাকা থেকে প্রতি মাসে এক দিন গরিব ও অসহায়দের জন্য বিনা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। গত তিন বছর ধরে তারা তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ অসহায় মানুষকে খাবার দিয়ে আসছেন।

ওই রেস্টুরেন্টটিতে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৭০ জন। তাদের মধ্যে শ্রমিক মো. ইব্রাহিম ২০২০ সালে তাদের মাসিক বেতন থেকে ৫০-১০০ টাকা করে তোলা শুরু করেন এবং তা দিয়ে অসহায়দের মধ্যে খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেন।

হাজীগঞ্জ গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের শ্রমিকরা জানান, চাঁদপুরে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে হাজারো মুসল্লি অংশ নেয়। এ মসজিদের প্রাঙ্গণে শত শত ভিক্ষুক ভিক্ষা করতে আসে। শুক্রবারে অনেক মুসল্লি অসহায়দের মধ্যে খাবার বিতরণ করলেও খাবারের স্বল্পতার জন্য ফকির ও অসহায়দের মধ্যে কাড়াকাড়ি করতে দেখা যায়। ভিক্ষুকদের এ অবস্থা দেখে তারা নিজেদের টাকা জমিয়ে সপ্তাহে একদিন খাবারের ব্যবস্থা করেন। শ্রমিকদের এ কার্যক্রমে খুশি হয়ে রেস্টুরেন্ট মালিক মো. কাউসার হোসেনও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত হাজীগঞ্জ গাউছিয়া হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে সকাল থেকেই চলছে রান্নার কাজ। হোটেলের স্টাফরা খাবার তৈরি করছেন। পরে স্টাফরা অটোরিকশাযোগে ভাত, মাংস, ডাল, থালা-বাসন নিয়ে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের প্রাঙ্গণে যুক্ত হয়। মসজিদের জুমার নামাজ শেষে অজুখানা ও মাঠ প্রাঙ্গণে প্রায় ৩ শতাধিক ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন, রিকশাচালক, দিনমজুর, পথচারী, মুসাফির এসে জড়ো হয়েছেন। পরে তাদের মধ্যে খাবার বিতরণ শুরু করা হয়।

তাদের কেন এমন উদ্যোগ- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক মো. ইব্রাহিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার এ মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে মসজিদের  প্রাঙ্গণে হাঁটার সময় দেখি গরিব, অসহায়, ভিক্ষুকরা ঘুরাঘুরি করতে থাকে। কিছু মানুষ মানত, এবং মৃত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তির জন্য স্বজনেরা মসজিদে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করে। এসময় একজনকে দিতে গেলে  দশ জন কাড়াকাড়ি করে। তাদের এ অবস্থা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে। পরে দোকানে গিয়ে মালিক ও সহকর্মীদের বিষয়টি জানাই । তাদের সাথে পরামর্শ করি। আমরা প্রতি মাসের একদিন শুক্রবারে মসজিদে আসা গরিব ও অসহায়দের বিনামূল্যে  রান্না খাবার দেব। আমাদের বেতনের একদিনের টাকা দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করব। তারা প্রস্তাবে রাজি হয়, এবং মালিকও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম জানান, এই হোটেলের আয়োজনে প্রতি জুমায় বিনামূল্যে খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। আমরা দুইশ মানুষ এখানে খাবার খাই। আমাদের খাবারগুলো কিনে খেতে অনেক কষ্ট হয়। এজন্য হোটেলের মালিক লিটন ভাই ও স্টাফরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি দোয়া করি , আল্লাহ যেন তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের পেরেশানি থেকে মুক্তি করে। তারা যে আশা ভরসায় এ কাজ করে আল্লাহ যেন তাদের মনের আশা পূরণ করে। তারা যেন আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে আল্লাহ তাদের সুযোগ দান করুক ।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির জানান, তাদের এ ধরনে উদ্যোগ খুবই মানবিক  এবং দেশে খুবই বিড়ল। এ হোটেল কর্মচারীদের কার্যক্রম সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ধরনের  উদ্যোগে সমাজের বিত্তবান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে অসহায় মানুষের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে।

আরকে