রংপুরে পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের ‘দর্শক’ হিসেবে জোর করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে। খোদ ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এই অভিযোগ তুলেছেন। 

বুধবার (১৪ জুন) সকালে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি তুলে ধরেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবির) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক।

তার স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, পরীক্ষা বাদ দিয়ে রংপুর বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিতে বুধবার ছিল বিভাগীয় সাহিত্যমেলার উদ্বোধনী দিন। অধ্যাপক মাহমুদুল হকের ছেলের পরীক্ষা ছিল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ে পরীক্ষা বন্ধ রেখে তার ছেলের মতো অন্য শিক্ষার্থীদেরও নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে। 

উদ্বোধনী ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নুরুল হুদা।

নগরীর বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইমুন মিহরানের বাবা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হক তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, স্কুলের বাচ্চাদের পরীক্ষা বাদ দিয়ে অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। 

তিনি আরও লিখেন, পরীক্ষা বাদ দিয়ে রংপুর বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাচ্চাদের রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমিতে এখন প্রোগ্রাম চলছে। আজ আমার ছেলের সকাল ১০টা-১টা পর্যন্ত পরীক্ষা ছিল। এখন সে অনুষ্ঠানের দর্শক। এর দায় কে নেবে? বাচ্চাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া এমনিতেই বেআইনি, এর ওপর ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে।

ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে মাহামুদুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, একজন শিক্ষকের ফোন থেকে ছেলে ফোন দিলে আমি স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলাম আমার ছেলে প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ওই অনুষ্ঠানে যেন না যায়। আমি দ্রুত প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অধ্যক্ষকে অনুরোধ করি যাতে কোথাও গেলে আমার অনুমতি ছাড়া না যায়। কিন্তু এরই মধ্যে পরীক্ষারত অবস্থায় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার্থীদের ওই অনুষ্ঠানে নিয়ে যায় তারা। এমনকি পরীক্ষার খাতাও জমা নেয়নি। ছেলে বাসায় খাতা নিয়ে এসেছে বাধ্য হয়ে।

তিনি আরও বলেন, ডিসির প্রোগ্রাম বলেন আর বিভাগীয় কমিশনারের প্রোগ্রাম বলেন, এ ধরনের প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া বেআইনি। কোনোভাবেই শিক্ষা কার্যক্রম বাদ দিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে কোনো অনুষ্ঠানে নেওয়া যেতে পারে না। তার ওপর তাদের বুধবার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ছিল, তা সত্ত্বেও বাচ্চাদের স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো বা বাধ্য করা হয়েছে, এটা একবারেই বেআইনি। বিষয়টি উদ্বিগের, পরীক্ষা বাদ দিয়ে প্রশাসনের লোকজন কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গেল মাথায় আসে না।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, বিভাগীয় কমিশনারের অফিস ও ডিসি অফিস থেকে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করাতে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়। এটাতো না মানার কোনো সুযোগ নেই আমাদের। তাই পরীক্ষাই হোক আর গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসই থাকুক না কেন যেতেই হয়।

বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এক পরীক্ষার রুটিনে দেখা গেছে, বুধবার ডিজিটাল টেকনোলজি বিষয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ও বাংলা বিষয়ে ৭ম শ্রেণির পরীক্ষার তারিখ রয়েছে। সেই সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে মাঝপথেই পরীক্ষা বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের দর্শক হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আহসান হাবিব বলেন, বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। যেহেতু সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠান, সেহেতু আমার কাছে ছাত্র-ছাত্রীদের চাওয়া হয়েছিল। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের বুধবার অর্ধবার্ষিক মূল্যায়ন ছিল, এটা পরীক্ষা না। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল আর কিছুই নয়।  

শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি শুনেছি এবং আমি দেখেছি তিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে সেখানে দুটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী পরীক্ষা তো শুধু এসএসসি ও এইচএসসির হবে। 

বিভাগীয় সাহিত্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন, বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর