‘আমি বলি বাদশা। আর ছেলে বলে রাজা। এটা আমাদের মা-ছেলের ভালোবাসার ডাক। বাড়িতেই তার জন্ম। তাকে সাড়ে তিন বছর ধরে লালন-পালন করছি। আমি একটা কলা খেতে লাগলে তার অর্ধেক বাদশাকে দেই। বাদশাকে আমি সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার তেলিপুকুর গ্রামের বাসিন্দা মোসা. রাশেদা বিবি। তিনি নিজ বাড়িতে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের বিশাল আকৃতির একটি  ষাঁড় দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করেছেন। নাম রেখেছেন বাদশা। আসন্ন ঈদুল আজহায় ষাঁড়টি বিক্রি করবেন তিনি। সাদা-কালোর মিশ্রণে সুঠাম দেহের বাদশার ওজন প্রায় ৩০ মণ। এই ষাঁড়টির দাম চাওয়া হচ্ছে ১২ লাখ টাকা।

রাশেদা বিবি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়িতে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভি ছিল। বাদশা হওয়ার পরে তার মাকে ১ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দেই। তারপরে বাদশাকে লালন-পালন শুরু করি। বাদশার সাড়ে তিন বছরে ৬ দাঁত। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পরিবারের সবাই মিলে যত্ন করে ষাঁড়টি বড় করেছি। 

রাশেদা বিবির ছেলে জিল্লুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকদিন আগে ফিতা দিয়ে মেপেছি রাজাকে। লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বুকের বেড় ৮ ফুট ২ ইঞ্চি। এতে অনুমানিক ওজন ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২০ কেজি। কয়েকজন ষাঁড়টির দাম ৯ লাখ টাকা বলেছে। বাদশাকে হাটে নেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই আমরা চেষ্টা করছি বাড়ি থেকে বিক্রির। কেউ যদি কিনে আমাদের বাড়িতে রাখতে চায় তাহলে সমস্যা নেই। আমরা লালন-পালন করে ঈদের আগের দিন পৌঁছে দেব।

তিনি আরও বলেন, রাজাকে গোসল করাতে হয় দিন রাত মিলে ৫ থেকে ৬ বার। সমস্ত পানি টিউবওয়েল থেকে তুলতে হতো। কমপক্ষে ১০০ বালতি পানি তোলা লাগে। এতে অনেক কষ্ট হতো। তাই পানি তোলা মটার বসানো হয়েছে রাজার গোসলের সুবিধার জন্য। এছাড়া সব সময় তিনটা ফ্যান চলে। বিদ্যুৎ গেলে আইপিএসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের ঘরে ফ্যান না চললেও রাজার মাথার ওপরে চলে। রাজার খাবারের টাকা জোগাড় করতে মানুষের কাজে যাই। 

রাশেদার স্বামী লুৎফর রহমান বলেন, বাদশা সব ধরনের খাবার খায়। খাবারের তালিকায় রয়েছে কাঁচা ঘাস, খড়, গমের ভুসি, চালের গুড়া, ভুট্টা, ডালের গুড়া, খৈল, ছোলা ও খুদের ভাত। সবমিলে দিনে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে খাবার খায় বাদশা। প্রতিদিন বাদশার পিছনে খরচ হয় ৮০০ টাকা।

বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, গরুটা অনেক বড়। আমিও দেখেছি। আমাদের বাগমারায় সবচেয় বড় গরু এটি। তারা দীর্ঘদিন থেকে লালন-পালন করে আসছে।

বাগমারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই উপজেলায় সবচেয়ে বড় গরু বাদশা। আমার ধারণা ওজন ৩০ মণের ওপরে যাবে। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জে, সেখানকার অনেক বড় বড় বেপারী রয়েছে। তাদের আমি ছবি পাঠিয়েছে। আমার দিক থেকে বিক্রির জন্য চেষ্টা করবো। আপনারাও বিক্রির চেষ্টা করেন। 

শাহিনুল আশিক/আরএআর