বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়ায় ৫৬ শতাংশ জমির ওপর গড়ে ওঠা খেলার মাঠটিতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যাচ্ছে জেলা পুলিশ। ইতোমধ্যে খেলার মাঠটিতে দোকান ও গোডাউন বরাদ্দের জন্য সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।

অর্পিত সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা খেলার মাঠে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশিষ্টজনরা। তবে পুলিশ দাবি করেছেন, নিয়মিত সরকারকে পুলিশ খাজনা দিচ্ছে। জমির মালিক বাংলাদেশ পুলিশ।

জানা গেছে, জেলা পুলিশের আওতায় থাকাকালীন কাউনিয়া এলাকায় পুলিশি সেবার গতি বাড়াতে সেকশন মাঠের একপাশে গড়ে তোলা হয়েছিল পুলিশ ফাঁড়ি। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর জেলা পুলিশের সেই ফাঁড়িটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে জমি হাতছাড়া করেনি জেলা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সকালে সেকশন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের মাঝখানেই সাইনবোর্ড দেওয়া। তাতে জমিটি জেলা পুলিশের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে উল্লেখ করে দোকান ও গোডাওনের জন্য বরাদ্দ নিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, যুগ যুগ ধরে স্থানীয়রা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যখন এখানে পুলিশ ফাঁড়ি ছিল তখনও খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত হতো। মাঠটি মূলত অর্পিত সম্পত্তি। কিন্তু সুযোগ বুঝে পুলিশ তাদের করে নিচ্ছে।

খেলাঘর এর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তৌছিক আহমেদ রাহাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাউনিয়ার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলে এই দুই ওয়ার্ডের তরুণদের খেলাধুলা ও মেধা বিকাশের একমাত্র মাঠ এটি। এখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ঈদের জামাত, জানাজার নামাজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যুব সমাজের উদ্যোগে ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও হয়। মাঠটিতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের যাওয়ার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

তিনি জানান, ১৯৯৩ সালেও একদল ভূমিদস্যু মাঠটি দখলের চেষ্টা চালিয়েছিল।

আরেক বাসিন্দা মিলন বলেন, সেকশন খেলার মাঠটির চারপাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্লাসের ছুটিতে তারা এখানেই খেলাধুলা করে। এরমধ্যে মাঠ লাগোয়া আছমত মাস্টার বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আছমত মাস্টার বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কাউনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশরাফিয়া জামে মসজিদ, আশরাফিয়া মাদরাসা ও শুকতারা খেলাঘর।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনায়েত হোসেন শিবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ কোনো ব্যবসা ও লাভজনক বাহিনী নয়। পুলিশ বাহিনী শতভাগ সরকারি অর্থে পরিচালিত একটি প্রশাসনিক বাহিনী। অথচ এখন অবস্থা যা দেখছি সরকারি বাহিনী পুরোপুরি ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে পড়েছে। বরিশাল পুলিশ লাইন রোডের জায়গায় ব্যারাক ভেঙে মার্কেট বানিয়েছে। এর পূর্বে মল্লিক রোডে পুলিশ ক্লাবের জমির পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশ লাইন্সের সামনে মার্কেট গড়ে তুলেছে। এখন কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডের পুলিশ ফাঁড়ির জায়গায় মার্কেট বানানোর পাঁয়তারা চলছে। একটি সরকারি বাহিনীর দ্বারা এমন আচরণ কখনোই কাম্য নয়। কাউনিয়ার ওই জমিটি অর্পিত সম্পত্তি। সেখানে খেলার মাঠ আগেও ছিল, এখনও আছে। সেখানে পুলিশ দোকান/গুদাম ভাড়া দেওয়ার জন্য পারে না। আমরা শুক্রবার স্থানীয়দের নিয়ে বসে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করবো। একটি মাঠ হারানো মানে তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দেওয়া। আমরা চাই জেলা পুলিশ বিষয়টি ভেবে দেখবে।

৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, মাঠটি পুলিশের দালিলিক সম্পত্তি নয়। স্বাধীনতার আগে এক ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য স্থান দেওয়া হয়েছিল। অথচ সেই মাঠে পুলিশ দোকান ও গুদাম দিতে সাইনবোর্ড দিয়েছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয়রা শুক্রবার বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ বিষয়ে বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৬৪ সাল থেকে সেকশন মাঠটির মালিকানা পুলিশের। এ বছরও আমরা ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা খাজনা দিয়েছি। আমরা যদি মালিকানায় না থাকতাম তাহলে সরকার আমাদের কাছ থেকে খাজনা নিত না।

তিনি বলেন, খেলার মাঠের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন জনপ্রতিনধিরা। আমাদের জমি পরিত্যক্ত থাকায় সেখানে বিকল্প ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এমএএস